বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, বিক্ষোভের অধিকারকে সম্মান দেখাতে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরার ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং প্রতিবাদ বিক্ষোভের অধিকারকে সব নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী স্বীকৃতি দেবে এবং সম্মান করবে।
একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান- সম্প্রতি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কিছু নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল সফর করছেন। তাদের সঙ্গে বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যোগাযোগ করছে না। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে এসব দল ভাঙচুর ও রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না? এ প্রশ্নের জবাবে ফারহান হক বলেন, বিশ্বের সব জায়গায়ই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। তার প্রেক্ষিতে আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং প্রতিবাদ; বিক্ষোভের অধিকারকে সব নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী স্বীকৃতি দেবে এবং সম্মান করবে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে আমরা অব্যাহতভাবে উৎসাহিত করি।
এরআগে, শুক্রবার (৪ আগস্ট) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে নির্বাচন-সমাবেশ নিয়ে প্রেস নোট প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ্য করা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধীদলগুলোর বেশ কয়েকটি সমাবেশে সহিংস হামলা দেখা গেছে। সমাবেশগুলোতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করেছে। পুলিশের পাশাপাশি কিছু সাধারণ পোশাকধারীদেরও বিক্ষোভকারীদের মারতে হাতুড়ি, লাঠি, ব্যাট এবং লোহার রড ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এসব সংঘর্ষে অনেক বিরোধীদলীয় সমর্থক ও কিছু পুলিশ আহত হয়েছেন। বিরোধীদলের সিনিয়র নেতাদের প্রকাশ্য দিবালোকে মারধর করা হয়েছে। আবার আইন-প্রয়োগকারী সংগঠনের সদস্য পরিচয়ে তাদের বাড়িতে অভিযানও চালানো হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মানবাধিকারের প্রতি তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে এবং জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে এসব অধিকার চর্চার প্রচেষ্টাকে দমিয়ে দিতে না পারে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন শুধু যেখানে অত্যন্ত প্রয়োজন সেখানেই বল প্রয়োগ করেন। আর সেক্ষেত্রেও এই বল প্রয়োগ হতে হবে বৈধ, সংযমের সঙ্গে এবং সংশ্লিষ্ট নীতি অনুসারে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই যেন আগামী বছরের নির্বাচনের আগে যারা রাজনৈতিক প্রচার শুরু করেছেন তাদের সবার জন্য একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। তাদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে রাজনৈতিক বহুত্ব এবং ভিন্ন মতামত প্রকাশকে সম্মান জানাতে হবে।
এর আগে সোমবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশের আন্দোলন-গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেন সভা-সমাবেশের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ক্লেমো ভউল।
এক টুইটার (এক্স) পোস্টে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি।’
টুইটে হ্যাশট্যাগ বাংলাদেশ লিখে ক্লেমো ভউল লেখেন, ‘চলমান বিক্ষোভ সমাবেশে সংঘাত ও গ্রেপ্তারের মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থায় সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টুইটে আরও বলেন, ‘দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে বলব, তারা যেন সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে এবং বাড়তি বাহিনী মোতায়েন না করে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধীমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি।’বাংলাদেশের পতাকার একটি চিত্রজুড়ে দিয়ে টুইট করেন জাতিসংঘের এই বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার।