শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ

পদ হারানোর আতংকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনে নেতা কর্মীরা

 

  ঢাকার প্রবেশপথে বিএনপির ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় দলটির একমাত্র নীতিনির্ধারক দারুণ চটেছেন। লন্ডনে অবস্থানরত ওই নেতা বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের ঢাকার নেতাদের ‘শাস্তি’ দিচ্ছেন। অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে না পারায় ব্যর্থতার অভিযোগে নেতাদের পদচ্যুত করছেন তারেক রহমান। শাস্তির খড়গ নেমে আসছে অনেক পরীক্ষিত নেতার ওপরও। এতে অনেক সিনিয়র নেতাও আছেন পদ হারানোর আতঙ্কে। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে- বিএনপি মহাসচিবও কারো পদ থাকার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। কেন্দ্র, মহানগর, জেলা-উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা এতদিনের ত্যাগের পরও হারাতে পারেন সাংগঠনিক দায়িত্ব।

বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, বাঁচা-মরার এই লড়াইয়ে কর্মসূচি সফল করতে পিছপা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। লড়াই না করে দৌড়ে পালানোর সুযোগ নেই। ২৯ জুলাই কর্মসূচি চলাকালে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মাতুয়াইল এলাকায় পুলিশ দেখেই ভোঁ- দৌড় দিলে হাইকমান্ড তা ভালোভাবে নেয়নি। তবে সম্প্রতি তার মায়ের মৃত্যু হওয়ায় মানবিক কারণে তাকে পদচ্যুত করা হয়নি। আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েছেন তারেক রহমান। এমনকি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আছে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যদের বিরুদ্ধে। তারও ‘বড়পদ’ হারাতে পারেন। আবার পদ প্রত্যাশী একজন আরেকজনের ব্যর্থতার খবর পৌঁছে দিচ্ছেন হাইকমান্ডে। স্থানীয়রা একে বলছেন ‘গুটিবাজি’।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ও এক সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দিষ্ট স্পটে দৃশ্যমান থাকতে হবে। অবস্থানের ভিডিও এবং ছবি থাকতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচার করতে বা করাতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা পদ হারাবেন- এমন কঠোর নির্দেশনা রয়েছে সব পর্যায়ের নেতার ওপর। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই শাখা, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ও ছাত্রদলের সভাপতিকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সংগঠনের ঢাকা মহানগরের চারটি শাখা, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের দুটি শাখায় জরুরি ভিত্তিতে কমিটি পুনর্গঠন হবে। আগস্টের মধ্যেই সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

দলীয় সূত্র মতে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের বিকল্প হিসেবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং এই শাখার সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুন নবী খান সোহেল, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিব এবং হামিদুর রহমান হামিদের নাম আলোচনায় রয়েছে। সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়ার ভাবনা চলছে। আবার আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক রেখে তানভীর আহমেদ রবিনকে সদস্য সচিব এবং হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দিতে চান এক নেতা। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমানের দণ্ড থাকায় তিনি কারাগারে যেতে পারেন।

এ সময় আমিনুল হককে সদস্য সচিব রেখে আহ্বায়কের দায়িত্ব কাকে দেয়া যায় তা ভাবছেন তারেক রহমান। কারাবন্দি সাবেক যুবদল নেতা সাইফুল আলম নীরব বা এস এম জাহাঙ্গীরকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ পদে আনার কথা বলছেন অনেকে। তা না হলে স্থায়ী কমিটি থেকে কাউকে এই ইউনিটের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে আন্দোলনের মাঠ চাঙ্গা করার কথাও ভাবা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের আলোচনায় এর আগে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নামও শোনা যাচ্ছে। আন্দোলনমুখী কমিটি গঠনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের নামও আলোচনায় রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে ছাত্রদলের চার ইউনিটের সম্ভাব্য কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন অন্তত ২০ জন নেতা। এতে ঢাকা মহানগর উত্তরে মনির হোসেন, সাজেদ খান, মনিরুল ইসলাম, মো. সালাউদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল হামিদ নীরব, এম এ রহিম ও সাগর বাবু এবং মহানগর পশ্চিমে জুয়েল রাজ, আকরাম আহমেদ, জিন্নাহ, বশির ও আশরাফুল আলম মামুন, মহানগর পূর্বে মো. আলামিন, সোহাগ ভূঁইয়া, ইফতেখার ফয়সাল ও রিয়াজুল ইসলাম রাসেল, মহানগর দক্ষিণে নিয়াজ মাহমুদ নিলয়, আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, রফিক হাওলাদার, রাজু আহমেদ ও শামীম আহমেদ আছেন ভাবনায়।

বিএনপির দপ্তর সেল থেকে জানা গেছে, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব উত্তর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী হলেও তিনি আছেন কারাগারে। যুবদল মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর কারাগারে। তবে মহানগরের নেতৃত্বের ভাবনায় তাদের নাম রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে তথ্য রয়েছে, রাজধানীর চার প্রবেশমুখের প্রতিটিতে ২০ থেকে ৩০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা লোকবল আনতে পারেননি। রাজধানীর শনির আখড়া-যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার ধোলাইখালে নেতাকর্মীরা লড়াই করে অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু এই দুই জায়গায়ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সব নেতা উপস্থিত ছিলেন না। গাবতলী ও উত্তরায় অবস্থান কর্মসূচি সফল হয়নি। গাবতলীতে জমায়েতই হতে পারেননি নেতাকর্মীরা। উত্তরার অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েকশ নেতাকর্মী জড়ো হয়ে ফুটপাতে সমাবেশ করেছেন। কিন্তু পুলিশের ধাওয়ায় তারা স্থান ত্যাগ করে চলে যান।

ব্যর্থতার অভিযোগে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবনকে সরিয়ে রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়। উত্তরের আহ্বায়ক করা হয় শরীফ উদ্দিন জুয়েল এবং দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয় এনামুল হক এনামকে। তবে দুই মহানগরের সদস্য সচিবসহ বাকি পদগুলোয় যাদের আনা হয়েছে তারা ‘ফিট না’ বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের পর থেকে তাদের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। অবস্থান কর্মসূচির দিন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানকে গাবতলীতে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সভাপতি এস এম জিলানিকে কিছু সময়ের জন্য দেখা গেলেও পরে সটকে পড়েন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল হতাশাজনক। মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসতে পারে।

 

আরও পড়ুন