শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ

সর্বজনীন পেনশন প্রবাসীসহ সব নাগরিক অংশ নিতে পারবেন, নিয়ম

বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনিন পেনশন কর্মসূচিটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক সরকারি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। নাগরিকদের চার শ্রেণিকে বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিধিমালায় মোট ১৮টি ধারা রাখা হয়েছে। আর বিধিমালার চার নম্বর ধারায় পেনশনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও ৫ নম্বর ধারায় মাসিক চাঁদা দেয়ার নিয়মের বিষয়ে বলা হয়েছে।

চারটি স্কিমের মধ্যে রয়েছে, ১. প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, ২. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, ৩. স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও ৪. স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।

গতকাল সোমবার (১৪ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়।

পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন

১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।

তবে শর্ত রয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সের নাগরিকরা স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।

তবে শর্ত রয়েছে, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।

শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে, নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে শর্তের মধ্যে রয়েছে- স্কিমে অংশগ্রহণ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর প্রদান করা হবে।

আর সকল ক্যাটাগরির আবেদনে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ অবহিত করা হবে।

চাঁদা দেয়ার নিয়ম:

কোনো ব্যক্তি যে স্কিমের আওতায় নিবন্ধিত হবে সে স্কিমের জন্য ধারণকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে তফশিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি (ওভার দ্যা কাউন্টার) পদ্ধতিতে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাবে এবং এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা প্রদান সাপেক্ষে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।

কোনো চাঁদা দাতা ধারাবাহিকভাবে তিন কিস্তি চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না। চাঁদা দাতারা মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা করতে পারবেন।

কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্যকৃত মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে। সকল স্কিমের জন্য চাঁদার ভিত্তি চাঁদা দাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে।

চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা প্রদান করা না হলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ পাঠানো হবে।

গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়।

এছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করা হবে এবং এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই দিন থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। এর বাইরে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও যেকোনো ধরনের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য পেনশন কর্মসূচিটি কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

আরও পড়ুন