বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক এমপি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেব। আমরা দেখিয়ে দিব বাংলাদেশ থেকে কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যাবে না। আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে জনগণের কাছে সত্য ইতিহাস উপস্থাপন করবো, বলেও যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রেলস্টেশন চত্ত্বর এলাকায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আখাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝিয়েছিলেন ছিলেন যে বাংলাদেশের মানুষ অধিকার পাচ্ছে না, তিনি বুঝিয়েছিলেন ছিলেন যদি বাংলাদেশের মানুষ অধিকার চায় তাহলে তাদের আন্দোলন করতে হবে এবং সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব তিনি দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন তিনি কখনও পাকিস্তানি শাসকদের সাথে আপোষ করেন নাই। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অনেক নেতাই আইয়ুব খানের সাথে এক এক করে আপোষ করেছেন শুধু বঙ্গবন্ধুই আপোষ করেন নাই। তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৭ই জুন ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়েছিলেন। এই ৬ দফা আন্দোলন এর জন্য বঙ্গবন্ধুকে এক নাম্বার আসামী করে বিচার কার্য শুরু হয়েছিল। তখন বাংলার জনগণের আন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। মুক্তির পর যখন বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানের জনসমাবেশে ভাষণ দিতে আসেন তখন বাংলার মানুষ বুঝতে পারেন যে, তিনিই হচ্ছেন তাদের আসল বন্ধু। এবং সেজন্যই সেই দিন থেকে তিনি পরিচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হিসেবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন করে ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভের পরও তাকে সরকার গঠন করতে দেয়া হয় নাই। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তারাও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করার সাহস পায় নাই। কিন্তু ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট কিছু মীরজাফর, বেইমানরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। তিনি যখন সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তখন তাকে হত্যা করা হয়। আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এবং আপনাদের সেই বেইমানদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশ চায়নি তারাই সেদিন এই ষড়যন্ত্রের সাথে ছিল। যদি সেই দিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে না থাকতো তাহলে সেদিন হয়তো তাদেরও হত্যা করা হত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যারা দেশে এসে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার ও জেল হত্যার বিচার শুরু করেছিলেন। আমরা দেখেছি ১৯৯৬ সালের পর ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র মূলক এক নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেয়। আমি তৎকালীন আইনমন্ত্রীকে বলেছিলাম যে, আপনারা ২/৩জন জজ যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ দেন তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারটা শেষ করতে পারি সেই আইনমন্ত্রী হাসি দিয়ে বলেছিলেন আচ্ছা কিন্তু সেই আচ্ছা আর শেষ হয়নি। তারপর ২০০৯ সালে যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলেন তখনই কিন্তু আমরা বিচারটা শেষ করতে পেরেছি। এবং আসামীরা যারা দেশে এবং দেশের বাইরে ছিলেন তাদের বিদেশ থেকে এনে বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর করেছি। আপনারা জানেন এখনও দুজন আসামী বিদেশে আছেন তাদের দেশে এনে রায় কার্যকর করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমি আপনাদের বলতে চাই যতক্ষণ এই খুনিদের এনে রায় কার্যকর করতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। আপনারা জানেন এই বিচার শেষ হওয়ার পর দাবি উঠেছিল যে, যারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল তাদেরও ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সভাপতিত্বে এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আখাউড়া পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বেগ শাপলু প্রমুখ।