বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি নুর মোহাম্মদ জানান, সরকারি কাজে বাধা, মারধর, গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। তবে এ মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হলেও তাদের পরিচয় জানাননি ওসি।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদী গত সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সেই খবরে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাতেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও শাহবাগে ভিড় করেন। লাশ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে তারা পরে ‘তাণ্ডব চালায়’ বলে মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক আহমেদ।
তিনি বলেন, যখন লাশ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনো মতে এই লাশ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির। সঙ্গে তারা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।
এই হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, আমরা ধৈর্য্য সহকারে এই তাণ্ডব সহ্য করেছি, তারা লাশ নিয়ে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাক। আমরা কোনো শক্তি প্রয়োগ করিনি। ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেওয়া হল জানাজা পড়ার। কিন্তু ফজরের নামাজের পর তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নিল। তারা লাশ পিরোজপুর নিতে দেবে না।
এর মধ্যে তারা ফেসবুকে প্রচার করতে শুরু করে সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপরে অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করা হয়। টিয়ার শেল নিক্ষেপের মাধ্যমে বিএসএমএমইউ মুক্ত করে সাঈদীর লাশ পিরোজপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কমিশনার বলেন, জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায়নি, এটা তারা আবারও প্রমাণ করল। বিগত ২০১২-১৩ সালে তারা যেভাবে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, হেলমেট দিয়ে পিটিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটিয়েছে, সেই চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ তারা আবারও করল।
একাত্তরে ‘দেইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত সাঈদী পরে ইসলাম ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি কুড়ান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের তখনকার নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে ২০১৪ সালে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সাঈদীর মৃত্যুর পর মঙ্গলবার তার গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করেও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে কক্সবাজারের চকোরিয়ায় সংঘর্ষের সময় একজন নিহত হন।