শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ

জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন গঠনের দাবি বিএইচআরএফের

মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন- বিএইচআরএফ কর্তৃক শিশুদের সুরক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মত ‘শিশু অধিকার কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির চেয়ারপারসন এডভোকেট এলিনা খান ও মহাসচিব এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান প্রদত্ত এক যৌথ বিবৃতিতে এ ব্যাপারে তরিৎ ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ।বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘জাতিসংঘ শিশু সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা তথা জুবিন্যাল জাস্টিস বাস্তবায়নে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন’ গঠন জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

তারা বলেন, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে যেমন হিউম্যান রাইটস্ কমিশন আছে তেমনি শিশুর সুরক্ষা ও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে চাইল্ডস রাইটস কমিশন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সহ বহু দেশে ‘শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন’ থাকলেও তা বাংলাদেশে নেই । ফলে সাম্প্রতিক সময়ে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন,অপহরণ, খুন, গুম সহ বিভিন্ন রকম নিপীড়নের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশু সুরক্ষা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন।বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি।বাংলাদেশের প্রায় ৬০ লক্ষ শিশু এখনো শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ একেবারেই স্কুলে যায়নি আবার কেউ ভর্তি হলেও পরে ঝরে পড়েছে ।

শিশু মৃত্যুর হার আগে থেকে কমলেও তা এখনো অন্যান্য দেশে তুলনায় বেশি। শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, খুন ও গুমের ঘটনায় বছরের পর বছর ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় না, বিলম্বে চার্জশিট প্রদান ও ট্রায়ালের কারণে সাক্ষী ও আলামত নষ্ট হয় এবং আইনের ফাঁক – ফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় । ফলে শিশু নির্যাতনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালের শিশু আইন, বাস্তবায়নেও নানা সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনও শিশুদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদানেও আশানুরূপ কার্যকর প্রতিয়মান হচ্ছে না।

শিশু সংক্রান্ত বিষয়টি শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে, শিশুদের জন্য আলাদা কোন অধিদপ্তর নেই । বাজেটে শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়, তা জিডিপির শতাংশের সবচেয়ে কম বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় । সরকার জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন আইন ২০১৮ প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি । পিতা-মাতা-অভিভাবকহীন অসুস্থ অবহেলিত সুবিধা বঞ্চিত ভাসমান পথ শিশুদের সুরক্ষা দিতে এবং শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সঠিক ভূমিকা পালনের জন্য সারা দেশে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। বর্তমানে টাস্ক ফোর্স বা নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও দেশের সিংহভাগ শিশুদের কল্যাণে তা তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ‘জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিটি’ গঠিত হলে এসব বিষয় তদারকীতে সুবিধা হবে ।

শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় তথা শিশুদের উপর অত্যাচার, অন্যায় বন্ধ এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং পীড়িত শিশুদের বিশেষ যত্ন এবং সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্যা গুলো প্রস্তাবিত কমিশন বিবেচনায় এনে তার উপযুক্ত প্রতিকারের ব্যবস্থাও করবেন, শিশু অধিকার সংগঠিত হলে কমিশন তা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় সুরক্ষার প্দক্ষেপ নিবেন, এ কমিশন হবে স্বাধীন এবং শিশু অধিকার বাস্তবায়নে প্রশাসন, সরকার তাদের কাজে অনুচিত হস্তক্ষেপ করতে পারবে না ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বলৎকার, যৌন হেনেস্তা, বুলিং, অবৈধ শিশু শ্রম, বাল্য বিবাহ এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণ সহ শিশুদের জন্য নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এমন বিষয়গুলোও তারা দেখভাল করবে । লক্ষ লক্ষ শিশুর মাথায় ছাদ নেই, রাস্তায় বসবাস করে ও শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত শিশুদের বিরাট অংশ বৈষম্যের শিকার ও বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হয় এদেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকা সত্ত্বেও হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় । শিশু বান্ধব বিচার ব্যবস্থা আমরা এখনও গড়ে তুলতে পারিনি, পুলিশ শিশুদের বয়স বাড়িয়ে দিয়ে তাদের শিশু আইনের প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে।এই সব বিষয়ে সরাসরি তদারকির জন্য child rights commission বা ‘শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন’ গঠন করা অত্যন্ত জরুরী।

আরও পড়ুন