নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নেওয়ায় বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলা।
এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সপরিবারে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে যাওয়ার বিষয়ে ব্রায়ান শিলাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এ মুহূর্তে দেওয়ার মতো কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ এর বাইরে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এর আগে, শুক্রবার বিকেলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে সপরিবারে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে যান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। পরে এমরান এবং তার পরিবারকে গ্রেপ্তারের শঙ্কা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন দূতাবাসকে আশ্বস্ত করা হয়। পরে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তা জানালে এমরান রাতেই বাসায় ফিরে যান।
এমরান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। আমার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে অনবরত হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার ভালোবাসার প্রতিদান দেয় জেল দিয়ে। আমার আমেরিকার কোনো ভিসা নেই। তাই মার্কিন দূতাবাসে পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য বসে আছি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনও রয়েছেন। ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না। এ ছাড়া ড. ইউনূসের পক্ষে বিদেশিরা যে বিবৃতি দিয়েছেন, আমি তাদের সঙ্গে একমত।
এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সলিসিটর রুনা নাহিদ আক্তার এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২ (পিও নং- ৬) এর ৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন ব্যক্তি ড. ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলাচিঠি দিয়েছেন। ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ীর দেওয়া ওই চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিচারকাজ স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে চিঠিতে বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার সংকট ছিল জানিয়ে সামনের নির্বাচনের দিকে তাদের নজর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে এই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে গত কয়েক দিনে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ দেশের ৫০ জন সম্পাদক।