বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, দেশের জনগণ যখন বিপদগ্রস্থ হয়, তখন জনতার দল হিসেবে বিএনপি জনগণের পাশে দাঁড়ায়। ডেঙ্গু সচেতনতায় আজকের লিপলেট বিতরণ কর্মসূচ তারই প্রমাণ। যেখানে আমরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে একদফার আন্দোলনে আছি, সেখানে সারাদেশে আজ ডেঙ্গু নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করেছিলাম সরকার তার দায়িত্ব পালন করতে সফল হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম এই ডেঙ্গু প্রতিরোধেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তবে অর্থ লুটপাটে পরিপক্ষতা দেখিয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন মশা নিধনের যন্ত্রপাতি কিনেছে। যন্ত্রপাতি কেনার কথা ছিল সিঙ্গাপুর থেকে। সে যন্ত্রপাতি কিনেছে চীন থেকে। তার কারণে যতই মশা নিধনের চেষ্টা করুক না কেনো মশা মরবেনা, বরং মশা সরকারের সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে।
তিনি বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারস্থ তিন পুলের মোড়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতা এবং ডেঙ্গু সচেতনতায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত লিপলেট বিতরণপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের সাথে তিন পুলের মোড় থেকে লিপলেট বিতরণ শুরু করে জুবিলী রোড়, এনায়েত বাজার, লাভ লেইন হয়ে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জনসাধারণের মাঝে লিপলেট বিতরণ করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
এসময় মো. শাহজাহান বলেন, আমরা যে মূহুর্তে এই সরকার হটানোর আন্দোলনে রাস্তায় আছি , সেই মূহুর্তে আমাদের একটি মাত্র দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা। তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করা। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য নামতে হয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। তবে আমি বলবো বিএনপি মানুষের দল, কোনো দানবের দল নয়। বিএনপি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, কোনো সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল নয়।
তিনি বলেন, সরকার আজ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেলফি তুলে, আলিঙ্গন করে যেভাবে আন্দোলনের সাথে ঠাট্টা মশকারি করেছে, সরকারের মশা নিধনের যন্ত্রও মশার সঙ্গে একটা ঠাট্টার সামিল। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন শত শত লোক মারা যাচ্ছে কিন্তু সরকারের কোনো খবর নেই। শুধু সেপ্টেম্বরেই ১১৯ জন মানুষ হাসপাতালে মারা গেছে। এই বাইরে যে আর কত মানুষ মারা গেছে তার হিসেব নেই। এই পর্যন্ত ৭৭২ জন রোগী হাসপাতালে মারা গেছে।
তিনি বলেন, সরকারের একমাত্র আতংক এখন বিএনপি ও আমাদের নেতা তারেক রহমান। রাতের ঘুমের মধ্যে তাদের ভালো ঘুম হয় না। কারন বিএনপির আন্দোলনের স্বপ্ন দেখে হঠাৎ চিৎকার করে ঘুম ভেঙ্গে যায় সরকারের। শুধু ঘুম নয়, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সরকারকে গদি ছেড়ে দিতে হবে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মো. শাহজাহান বলেন, আমি আহবান জানাবো চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন জায়গায় যাতে বিএনপির পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্যাম্প বসানো হয়। যে ক্যাম্পে ডেঙ্গু রোগী আসলে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। রক্তের প্রয়োজন হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা গিয়ে রক্ত দেবে। রক্ত শুধু আন্দোলনে দিলে হবে না ,মানুষ বাঁচাতেও রক্ত দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডেঙ্গু করোনার মতো নতুন কোন রোগ নয়। সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন করতে এতো ব্যস্ত যে, এখন ডেঙ্গু সামলাতে পারছে না। পত্রিকায় দেখলাম, চসিক মশা মারতে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করার পর ডেঙ্গুর প্রকোপ নাকি আরো আট গুণ বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে জলবদ্ধতার জন্য সাত হাজার কোটি টাকা জলের টাকা জলেই চলে গেছে। জনগণ কোন সুফল পায়নি। এখনো সামান্য বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরী পানিতে ডুবে থাকে। আর এই জমাট বাধা পানি থেকে ডেঙ্গু মশার সৃষ্টি হয়। তাই ডেঙ্গু ভাইরাস ধ্বংস করার জন্য ক্লোরিন সলিউশন স্প্রে করুন। শুধু ক্লোরিন ট্যাবলেট কিনুন, এই ট্যাবলেট পানিতে মিশিয়ে দিন। দেখবেন পানিও বিশুদ্ধ হবে, ডেঙ্গুর এডিস ভাইরাসও ধ্বংস হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমছে না। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজারেরও অধিক। ৫৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে পৌঁছার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করছে। আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা না কমলে মৃত্যুর সংখ্যাও কমবে না।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বারবার এই ভয়াবহ রোগের পুনরাবৃত্তি হওয়া সত্ত্বেও সরকারের আগাম কোনো সতর্কতা বা প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করা হয়নি। দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের প্রাণের তোয়াক্কা করে না। নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্যই বরং জনতার লাশের সারি বিস্তৃত করে। এ বছর বিস্ময়কর ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবে মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ওই রোগ প্রতিরোধে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে নিম্নমানের কিট ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির কারণে রোগীদের এখন বেহাল দশা। প্রতিদিনই এত রোগী বাড়ছে, হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না। অথচ সরকার ডেঙ্গু মোকাবেলা না করে বিদেশিদের সাথে সেলফি তোলায় ব্যস্ত আছে। এই শোচনীয় অবস্থার জন্য অবৈধ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সাঙ্গ পাঙ্গরাই দায়ী।
এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম, মহানগর যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন, আহবায়ক কমিটির সদস্য নিয়াজ মো. খান, ইকবাল চৌধুরী, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আবুল হাশেম, আনোয়ার হোসেন লিপু, মো. কামরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এড. ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, নাজমুল মোস্তফা আমিন, মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, মোস্তাফিজুর রহমান, নুরুল কবির, ইসহাক চৌধুরী, হামিদুল হক মান্নান চেয়ারম্যান, শফিকুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, কেন্দ্রীয় জাসাসের সদস্য আমিনুল ইসলাম, থানা বিএনপির সভাপতি মন্জুর রহমান চৌধুরী, মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, আবদুল্লাহ আল হারুন, থানা সাধারণ সম্পাদক হাজী বাদশা মিয়া, জসিম উদ্দিন জিয়া, মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, জাসাসের সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ শিপন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক রবিউল হোসেন রবি, সদস্য সচিব কামরুদ্দিন সবুজ প্রমূখ।