পদ্মা সেতুতে গতি পরীক্ষা করেছে স্পেশাল ট্রায়াল ট্রেন। ১২০ কিলোমিটার গতিতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গেছে ট্রেনটি। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে গতি পরীক্ষা শুরু করে ট্রেনটি।
যাত্রীবাহী ট্রেনের গতির ট্রায়াল পদ্মা সেতুতে এটিই প্রথম। এ সময় ট্রেনে কয়েকজন স্থানীয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাত্রী হিসেবে ছিলেন।
ভাঙ্গা রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরের মাওয়া রেলস্টেশনের উদ্দেশ্য ট্রায়াল ট্রেনটি রওনা হয়। সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে সেটি মাওয়া পৌঁছায়। এ সময় ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এরপর মাওয়া থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে রওনা হয়ে ট্রেনটি ৯টা ৪৫ মিনিটে ভাঙ্গায় আসে। একই ট্রেন আবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে মাওয়া যায় এবং ১২০ কিলোমিটার গতিতে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ভাঙ্গা রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়।
ভাঙ্গা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আজ সকাল থেকে দুই দফায় পদ্মা সেতু পার হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতির ওয়াগন ট্রেনের (মালবাহী ট্রেন) গতি পরীক্ষা করা হবে।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু পাড়ি দেয় ট্রেন। ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যায় ট্রেনটি। ওইদিন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে ট্রেনটির সময় লাগে মাত্র সাত মিনিট।
পরীক্ষামূলক ওই ট্রেনের যাত্রী হিসেবে ছিলেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তার আগের দিন ৬ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথ উদ্বোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিয়েছেন ১০ অক্টোবর। সেদিন একটি সুধী সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা অংশ পর্যন্ত যাবে ও ফিরে আসবে। পুরো রেল প্রকল্প যশোর পর্যন্ত। সেটি উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর এ বছর চালু হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে।
জানা গেছে, রেলপথ পুরোপুরি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পদ্মা সেতু দিয়ে মানুষের রেল যোগাযোগ সহজ হবে। এর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হবে আরেকটি মাইলফলক। সেই সঙ্গে জিপিডিতে রাখবে বড় ভূমিকা।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই নতুন। পুরোনো ছয়টি স্টেশনকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় নতুন দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে রয়েছে। মাওয়া স্টেশনের পরে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় নির্মিত হচ্ছে ‘পদ্মা স্টেশন’। পদ্মা স্টেশনের পরে শরীয়তপুরে ‘শিবচর স্টেশন’। এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উন্নত দেশের আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে জংশন। ভাঙ্গা থেকে একটি লুপ লাইন ফরিদপুর সদর ও অন্য একটি লুপ লাইন নাগরকান্দা পর্যন্ত যাবে।