রাজধানীতে সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে টানা ৬ ঘন্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরের অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কও। এতে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। যানবাহন চলাচলে ধীরগতির কারণে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এদিন ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবারও রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে।
এদিন অফিস থেকে ঘরে ফেরা মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। অনেকে বৃষ্টির কারণে শপিংমল, দোকান ও ফ্লাইওভারের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে কাকভেজা হয়ে পায়ে হেটে ঘরে ফিরেছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের ২০ জেলার ওপর দিয়ে রাত ১টার মধ্যেই ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর হাতিরঝিল, ধানমন্ডি-২৭, পান্থপথ, ঢাকা কলেজ, জিগাতলা, এলিফেন্ট রোড, এয়ারপোর্ট রোড, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও সড়কে হাঁটু পানি জমে গেছে।
গ্রীনরোড এলাকায় জামাল হোসেন নামের নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কাজ শেষ হওয়ায় ৮টার দিকে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হই। নিচে এসে দেখি মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও বৃষ্টি না থামায় আবার অফিসে চলে আসি। পরে পৌনে দশটার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমলে অফিস থেকে বের হয়ে বাসার পথ ধরি। রাস্তায় এসে দেখি তীব্র যানজট। এখনো গাড়ি পাইনি, গাড়ির অপেক্ষায় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছি।
এলিফ্যান্ট রোডে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলেছিলেন রেজাউল করিম প্লাবন, তার সাথে কথা হয় ধানমন্ডি ১৫ নাম্বারে। তিনি বলেন, অফিস থেকে নেমে দেখি হাটু সমান পানি। রাস্তায় যান চলাচল একবারে থমকে আছে। বাধ্য হয়ে কোমর পানি পাড়িয়ে বাসায় ফিরলাম।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ফুটপাতের সবজির দোকান। ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, মিষ্টি কুমড়া পানিতে ভাসছে।
ধানমন্ডিতে দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থাকা বিকাশ পরিবহণের চালক হুমায়ন বলেন, আজিমপুর থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে। আর কতক্ষণ এখানে বসে থাকতে হবে জানিনা।
ধানমন্ডি ৮ নাম্বার ব্রিজের পাশে কথা হয় জয়নাল নামের এক প্রাইভেট কার চালকের সাথে, তিনি বলেন পানি ঢুকে গাড়ি বিকল হয়ে পড়েছে। পানিতে আটকা পড়েছি, জানিনা কখন পানি সরবে, পানি কমলে মেকানিক নিয়ে এসে গাড়ি সচল করতে হবে।
এছাড়াও তীব্র যানজট ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সোশ্যাল মাধ্যামে অনেকে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে দায়িত্বশীলদের অবহেলা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন ছুড়েছেন।
একজন ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, বৃষ্টি আর যানজটে অচল ঢাকা। পান্থপথ মোড়ে এক ঘন্টা বসে আছি। ট্রাফিক পুলিশের খবর নেই। ১১টায় গ্রীনরোড গাড়ী ডুবে গিয়ে গেট লক হয়ে যায়। অত:পর মহাবিপদ। গাড়ীর ভিতরে সীট পর্যন্ত পানি। ধাক্কিয়ে ধানমন্ডি ৭ /এ নম্বর যেয়ে আবার মিরপুর রোড। অফিসে গাড়ী রেখে ৭ নম্বর থেকে ২৪০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে টায় ১১.৪০ মিনিটি ১২/এ তে বাসায়। পথে হাজার নারী-পুরুষের দুর্ভোগ। শত শত গাড়ী পানিতে ডুবা। এই আমার রাজধানী। আল্লাহ সহায়।
আইয়া সুলতানা নামের একজোন তার ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, রাত পৌনে একটায় পানি ভেঙে আমার বাসায় ফেরা….. স্কুটি নিয়ে এসে ঢালের মুখে পানি দেখে স্কুটি অফিসে রাখতে গিয়ে দেখি গেট বন্ধ। পাশের রূপায়ন টাওয়ারের বেসমেন্টে অনুরোধ করে রেখে এসেছি! আমাদের যাদুর শহরে আজ সন্ধ্যা থেকে ঝুম বৃষ্টি নেমেছিলো। রাত সাড়ে বারোটায় বৃষ্টি কমার পর অফিস ফেরত লোকজন বাড়ি ফিরছেন। রাস্তায় মানুষ আর গাড়ির ভীড় দেখে মনে হচ্ছে সবে সন্ধ্যা।
রোকন খন্দকার নামের একজন তার সোশ্যাল মাধ্যমে লেখেন, উন্নয়নের ঠ্যালায় জুতা পা থেকে হাতে চলে আসে। এত উন্নয়নের ভার ঢাকাবাসী কিভাবে সইবে??? সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার এপার ওপার পানিবন্দি হয়ে যায়। মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আজ দেখলাম বৃষ্টির সময় রাস্তায় হাঁটু পানি, পথচারীরা জুতা হাতে নিয়ে হাঁটছেন। কাউন্টার এর যাত্রীরা জুতা হাতে নিয়ে হাঁটু পানি ভেদ করে গাড়িতে উঠছেন। আফসোস লাগে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেটেও এই দুর্দশা আর আমাদের মতো সাধারণ জনতার ভোগান্তি কে দেখে।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ দেশের ২০ জেলার ওপর দিয়ে রাত ১টার মধ্যেই ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
ঢাকা, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত অপর এক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে ঝাড়খণ্ড এবং তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু উত্তরাংশে সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
এর প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।