কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল কাঙ্ক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলে পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল করবে আজ। টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, টানেল ব্যবহারের জন্য শতভাগ প্রস্তুত। ভেতরের নিরাপত্তাজনিত কাজ এবং আলোকসজ্জাও শেষ হয়েছে। এরমধ্যেই আমরা ফিল্ড টেস্ট করেছি। আগামীকাল (আজ ২৩ সেপ্টেম্বর) পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে ইমার্জেন্সি মুডে ট্রায়াল করব। প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, ব্রিজ বা রাস্তা হলে অনেক আগেই এটি ব্যবহার করা যেত। টানেলের কারণে এটি সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী করতে সময় লেগেছে। সব কাজ শেষ শনিবার ট্রায়াল রান হবে। টানেলের ভেতরে–বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নিরাপদ থাকবে এই টানেল। টিউবের দুই পাশে এবং উপরের অংশে বসানো হয়েছে বিশেষ ধরনের লাইট, যা সার্বক্ষণিক দিনের মতো আলোকিত রাখবে টানেলকে। স্থাপন করা হয়েছে আড়াইশর বেশি হাই রেজুলেশন সিসি ক্যামেরা। টানেলের ভেতরে ‘সুই’ এর মতো সুক্ষ্ম কোনো বস্তু পড়ে থাকলেও সেটি ধরা পরবে ক্যামেরায়।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ভূমিকম্প কিংবা ঝূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও টানেল নিরাপদ থাকবে। তবে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাসে যান চলাচল ও দুই টিউবের মুখে বসানো ফ্লাড গেট বন্ধ থাকবে। গত সাইক্লোনে ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে জলোচ্ছ্বাসে কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া টানেলটি নদীর পৃষ্ঠ থেকে ১৮ হতে ৩১ মিটার গভীরে স্থাপন করা। এখানে ভূমিকম্পের প্রভাব পড়বে না। ভূমিকম্পে টানেল নিরাপদ থাকবে। পানি অপসারণে টিউবের ভেতরে ৫২টি পাম্প বসানো হয়েছে। আশা করছি, ১০০ বছরের মধ্যে এই টানেলের কিছুই হবে না।
উল্লেখ্য, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশ ও চীন সরকার ‘জি–টু–জি’ অর্থায়নে টানেলটি নির্মাণ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আগামী ৫ বছর টানেলটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বেও থাকবে প্রতিষ্ঠানটি।