গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে লাইভে এসে এমন মন্তব্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার শশী।তবে আজ রবিবার সকালে ওনার ফেসবুক আইডিতে ওই লাইভটি আর পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৫ মিনিটের ওই লাইভে ফারজানা আক্তার শশী বলেছিলেন, ‘যে দলই যখন ক্ষমতায় থাকুক, তখন তারা (ছাত্রসংগঠন) একটু সুবিধা পায়ই। এটা স্বাভাবিক, এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। খালেদা জিয়া (ক্ষমতায়) থাকলে, ছাত্রদলের বড় ভাই-বোনরাও অবশ্যই কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। জামায়াতের কেউ (ক্ষমতায়) থাকলেও, তারাও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো।’
‘একটু সুযোগ-সুবিধা’ ভোগ করার উদাহরণ হিসেবে এই নেত্রী বলেন, ‘কেননা, আমরা দেখছি যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নব্বইয়ের দশকে একজন মনে হয় ভিসি ছিলেন, যিনি জামায়াত সমর্থিত। ওনার সময়ে ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম মনে হয় শিবিরের কার্যক্রম শুরু হয়। তাহলে আমাদের যেখানে ভিসি ওয়ান-ইলিভেনের পরীক্ষিত নেতা, এ রকম একজন ভিসি আমরা পেয়েছি। তারপরও কেন হলের নেত্রীদেরকে আপনারা (সাংবাদিকরা) এভাবে কোনঠাসা করতে চাচ্ছেন?’
‘কোণঠাসা করতে’ চাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি নাই, তাই? আমাদের ভাইয়েরা সাবেক হয়েছে, আমরা তো সাবেক হইনি। আমাদের সম্মেলন হবে, সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তারপর আপনারা (সাংবাদিকরা) কিছু বলেন। তারপর আমরা হলে থাকি কিনা, হলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে টর্চার করি কিনা। তারপর আপনারা কথা বলেন। তাহলে শুধু শুধু কেন আমাদের নেতাকর্মীদেরকে ছোট করে কোনঠাসা করতে চাচ্ছেন?’
সাংবাদিকদের ভয় পান উল্লেখ করে ফারজানা আক্তার শশী বলেন, ‘যেভাবে সাংবাদিকরা আমাদের পেছনে লেগে পড়ছে, হাঁটতেও ভয় লাগে। একটু যে লিপস্টিক দেব, সেটা দিতেও মনে হয় এখন ভয় হয় যে লিপস্টিক দিলে বলবে যে, এই নেত্রীর টাকার উৎস কোথায়? তার মানে কি আমার মা-বাবা নাই? একটা লিপস্টিক কিনে দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার পিতামাতার নাই? তারা যদি কেজি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারে, তারা একটা লিপস্টিক কিনে দিতে পারে না? এখন লিপস্টিক যদি একটু বেশি করে দেন, তাহলে তারা ব্রান্ড খুঁজবে। কোন ব্রান্ডের লিপস্টিক দেয়? এটা ১ হাজার টাকা নাকি এটা ১২শ’ টাকা? তাহলে ছাত্রলীগ নেত্রীর সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হবে। আমাদের সাম্রাজ্য হচ্ছে, আমরা সিট ভাড়া দিয়ে হলে থাকি, আমরা সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি, আমরা শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি থাকি, আমরা তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। এগুলোই মনে হচ্ছে, আমাদের সবচেয়ে বড় দোষ।’
সাংবাদিকদের অথেনটিক নিউজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা কিছু বলার নাই। কি বলব আসলে? আমি লাইভে এসেছিলাম এজন্যই যে, সাংবাদিক ভাইয়েরা যে নিউজই করেন মানে একটু আমাদের..। আমাদের পক্ষে নিউজ করতে বলছি না। যে নিউজটা করবেন, সেটা যেন অথেনটিক হয়। অথেনটিক নিউজ করার চেষ্টা করবেন। সবসময় ওই যে হেডলাইনে ছাত্রলীগকে রাখলেই যে আপনাদের নিউজটা হিট হয়ে যাবে, ভিউ হয়ে যাবে অনেক বেশি, এগুলো চেন্তা করিয়েন না। আমরাও আপনাদেরই বোন। তারাও আপনাদের বোন, আমরাও আপনাদেরই বোন। সর্বোপরি আমরা সবাই সবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরাতো কারও ক্ষতি করছি না কখনো। আমরাতো কাউকে মারধর করছি না কখনো। আপনারা আসেন, হলে দেখেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনাদের যদি কোনো নিউজ না থাকে, তাহলে আমরা একটা পদে আছি জন্যই আমরা এতটাই ইয়ে হয়ে গেছি য, আমাদের কোনো কথা বলার রাইট নাই। আপনারা আসেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আপনারা খুঁজে দেখেন যে, কে কি করছে। তার ভিত্তিতেই আপনারা নিউজগুলো তৈরি করেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমার অনেক অনুরোধ, স্যার আমরা রাজনীতি করি, যে যে সংগঠনেরই হোক, তাদেরকে যেন কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছোটো করা না হয়। আমারতো মনে হচ্ছে, আমাদেরকে ছোটা করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
লাইভে আসা ও সেটি ডিলিট করে দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জানতে ফারজানা আক্তার শশীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তার নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া যায়।
তবে গতরাতে অন্য একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কিছুদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে অতিরঞ্জিতভাবে নিউজ করে যাচ্ছে সাংবাদিকরা। নিরপেক্ষভাবে সত্যটা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে লাইভটা করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) অবৈধভাবে নিজের দখলে রাখা সিট ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ায় হল গেটে তালা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাবির রহমাতুন্নেসা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না আক্তার তন্নির বিরুদ্ধে। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর হলের নিয়মকানুন ভঙ্গ করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ঐশী নামে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর রুম সিলগালা করে হল প্রশাসন। ঘটনা দুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা নিউজ করেছিলেন।