শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা মানুষ 

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। বাধ্য হয়ে অনেকে মৌলিক খাবারেও ছুরি চালিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাকে সামান্য স্বস্তি দিতে গেল ১৪ সেপ্টেম্বর আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, ডিম ও চিনির দাম বেঁধে দেয় সরকার। এরপর তিন সপ্তাহ পার হলেও বাজারে তার কার্যকারিতা মেলেনি। বরং কয়েকটি পণ্যের দাম আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা করার কোনো প্রয়োজনও বোধ করছেন না ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজার এবং হজক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধা বাজারে এ চিত্র দেখা গেছে। পাশাপাশি সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও বেশি দামের তথ্য উঠে এসেছে। নির্ধারিত দর অনুযায়ী প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৪ টাকা বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের কাছ থেকে ৭ থেকে ৮ টাকায় কেনা আলু হিমাগারে সংরক্ষণসহ ব্যয় হয় ১৪ থেকে ১৫ টাকা। সরকার
হিমাগারে আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে ২৬ টাকা। তবে এখানেও মানা হয় না সরকারি দাম। হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হয় ৩৬ থেকে ৩৬ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জসিম বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটা আমরা জানি। আমরাও চাই সরকারের দামে বিক্রি হোক। আমরাও তো কিনে খাই। কিন্তু পাইকারি বাজারে না কমলে আমরা খুচরায় কম দামে বিক্রি করতে পারমু না। সরকারের উচিত যেখান থেকে দাম বাড়ে সেখানে আগে কমানো তা হলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারমু। প্রতি হালি ডিমের দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ টাকা, যা বাজার দরের চেয়ে সামান্য কম। সেই দরও কার্যকর হয়নি। গতকাল প্রতি হালি ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
মাঝে কিছুটা কমলেও ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ থেকে ১৫৪ টাকা এবং প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হবে ১২৪ থেকে ১২৮ টাকায়। টিসিবির তথ্যমতে বৃহস্পতিবার বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৯ থেকে ১৭০ টাকা এবং পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। সরেজমিন আরও দুই থেকে তিন টাকা বেশি দর পাওয়া গেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খোলা চিনির নির্ধারিত মূল্য ১২০ টাকা এবং প্যাকেজজাত চিনির মূল্য ১৩৫ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে বাজারে চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, দাম নির্ধারণ করে দিয়ে লাভ কি যদি না বাজারে কার্যকর হয়। গত তিন সপ্তাহ ধরেই শুনছি সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে দাম কমবে। কোনো পণ্যের দামই তো কমল না। উল্টো দাম আরও বাড়ছে। যেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন ‘সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না’ দেখানে দাম কমবে কী করে?
যতক্ষণ অভিযান ততক্ষণ দাম কম
বাজারে নির্ধারিত দাম কার্যকরে অভিযান অব্যাহত রেখেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ‘ইদুর বিড়াল খেলা’ চলছে। বাজারে যখন ভোক্তা অধিকারের অভিযান চলে তখন দাম কম থাকে। অভিযান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্বের দামে ফিরে যান ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে মূল্য বেঁধে দিয়েছে সে দর কার্যকর করতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অভিযানে নির্ধারিত দাম না পেলে জরিমানা করা হচ্ছে। শুধু খুচরা বাজারে নয়, যেখান থেকে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে সেখানেও যাচ্ছি। হিমাগারেও অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের জনবল ঘাটতি আছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি। দাম কমে আসবে বলে আশা রাখছি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদক, আমদানিকারক, গুদাম ও পাইকারিতে দাম কার্যকর করতে না পারলে খুচরাতে দাম কমবে না। এ জন্য সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে হবে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সময়ের আলোকে বলেন, দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো ছিল। তবে এতদিনেও কার্যকর করতে না পারাটা ভালো লক্ষণ নয়। খুচরায় অভিযান চালিয়ে কোনো লাভ হবে না। উৎপাদনস্থলে গিয়ে অভিযান চালাতে হবে। খুচরায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে ব্যবসায়ীরা পরে জরিমানার টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকে উসুল করে নেন। এতে ভোক্তাদের আরও ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন