সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ

মহাসমাবেশ ঘিরে দুই পক্ষের প্রস্তুতি, জনমনে শঙ্কা

রাজধানীতে তিন কিলোমিটার দূরত্বে একই দিন মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রত্যেকের টার্গেট বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটানো। ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি সামনে রেখে দুই দলই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একই দিনে কাছাকাছি দূরত্বে দুই রাজনৈতিক দলের এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার বাতাস বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। কী হবে? কী হতে পারে? এসব প্রশ্ন। ভয় বাড়ছেই চারদিকে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে; ততই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করছে বিএনপি। অন্যদিকে সমান তালে মাঠে থেকে বিরোধীদের অপরাজনীতির জবাব দিয়ে ভোটের পথে হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থার মধ্যেই বিএনপির আল্টিমেটাম ‘২৮ অক্টোবর’; সেদিন মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরুর কথা বলছে দলটি। তারপর থেকেই রাজনীতিতে নতুন করে ছড়িছে উত্তাপ। রাজধানী দখলে রাখতে একইদিন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এইদিন বড় শোডাউন করবে দলটি। পাশাপাশি প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থায় থাকবে। এর বাইরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হবে সতর্ক পাহারা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে শামিয়ানা টানিয়ে সকাল থেকে অবস্থান করবেন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর সঙ্গে দলীয় সংসদ-সদস্য ও কাউন্সিলরাও তাদের অনুসারীদের নিয়ে মাঠে অবস্থান নেবেন।

অন্যদিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এজন্য সারাদেশের নেতাকর্মীদের তিন দিন আগেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তবে সতর্ক থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি সফলের জন্য সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে।

এ মহাসমাবেশ থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে। যা তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত লাগাতারভাবে পালনের কথা রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও এদিন প্রায় একই দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতও। এজন্য তাদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। দিনটিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপি সমমনা অন্তত ৩৭ রাজনৈতিক দলও মহাসমাবেশ করবে। তাই কী হবে ২৮ অক্টোবর- সেদিকেই এখন সবার চোখ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহর থাকবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের দখলে। সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগমের মাধ্যমে বিএনপির কবর রচনা করা হবে। রাজধানী ঢাকায় সারা বাংলাদেশ থেকে যে সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়েছে বিএনপি, ঢাকাবাসীর শান্তির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ওই সব সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আগামী শনিবার (২৮ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে সারাদেশ থেকে গণমানুষের ঢাকামুখী প্রবল তরঙ্গ, স্রোত ধেয়ে আসছে। স্বৈরাচার পতনের আওয়াজ আসছে রাজপথ থেকে। ফুঁসে উঠেছে গোটা দেশবাসী।

এদিকে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে কারণে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে- সে ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বিএনপির সমাবেশে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, জনগনের দুর্ভোগ না হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে- এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো একই দিনে কাছাকাছি স্থানে কর্মসূচি পালন করলে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সহনশীলতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। এ অবস্থায় যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু সাত দিন পর থেকে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফশিল ঘোষণা করা হবে-এমন ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এখনো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে পরস্পরবিরোধী অনড় অবস্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে অনড় ক্ষমতাসীন দল।

অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের যাচ্ছে দলগুলো। যা ২৮ অক্টোবর একযোগে পৃথক মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন