চলতি বছর তিনটি শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আগামী বছর আরও চারটি শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম চালু হবে। তবে এক বছর পার হতে না হতেই এই শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেকেই এর পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। এমনকি কিছু অভিভাবক এই শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে রাস্তায়ও নেমেছেন। তবে অভিভাবকদের বড় শঙ্কার জায়গা, এ শিক্ষাক্রমে পড়ে তাদের সন্তানরা কীভাবে উচ্চশিক্ষা নিবেন এবং কীভাবে কর্মবাজারে প্রবেশ করবেন?
অভিভাববক ও শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্ন যখন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে, এরমধ্যেই সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে আসলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি ১৫ বিভ্রান্তির ব্যাখ্যাও দিয়ে বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চালাচ্ছে একটি মহল। এরসঙ্গে কোচিং সেন্টার ও নোট-গাইড ব্যবসায়িরাও জড়িত। তারা চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে, চিন্তা করতে শিখুক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করুক। ওরা চায় মগজ ধোলাইয়ের শিক্ষাই চালু থাকুক। তারা বিভিন্ন ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর কিছু অভিভাবক উদ্বিগ্ন। তারা মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন যে তাদের সন্তানরা কীভাবে চাকরি পাবে? শিক্ষাজীবনের কোনো ফলাফল তাদের সন্তানদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে না, এমনটাও অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করেছি। সেটা হলো- চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও পারদর্শিতার মূল্যায়ন করা হবে। পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই নিয়োগ হবে। এ ব্যাপারেও ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলছেন, তাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে না। সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে এ শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন হবে। আমরা ইতিমধ্যে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) করছি। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের কারিকুলামে নবম শ্রেণিতে বিষয় বাছাইয়ের সুযোগ আছে, কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলা মাধ্যমে তা রাখা হয়নি। তবে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছ, প্রচলিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাক্রম ও ইংল্যান্ডের জাতীয় শিক্ষাক্রম এক না। ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের শিক্ষাক্রমেই নবম ও দশম শেণি পর্যন্ত বিষয় নির্বাচনের সুযোগ থাকে না।
দীপু মনি বলেন, অপপ্রচারকারীরা বলছেন বিজ্ঞান শিক্ষাকে খাটো করতে বিভাগ বিভাগজন তyলে দেয়া হয়েছে। তবে সঠিক ব্যাখ্যাটি হলো, নবম শ্রেণিতে পৃথিবীর প্রায় কোনো দেশেই বিভাগ বিভাজন করা হয় না। দশম বা একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে সাধারণত বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, আগে নবম ও দশম শ্রেণিতে মোট ৪০০ নম্বরের বিজ্ঞান থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে তা কমিয়ে ১০০ নম্বরের করা হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ নেই। আছে শিক্ষার্থীরা পারদর্শিতার পর্যায়।
উপকরণ কিনতে হয় তাই শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সঠিক ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, উপকরণের দাম বা চাকচিক্য বা সৌন্দর্য বিবেচ্য না। স্থানীয় সহজলভ্য ও পুন:ব্যবহার যোগ্য কাগজ বা উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশনা বারবার দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ার কোনো কারণ নেই। আর নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিং বা নোট বইয়ের খরচতো লাগছেই না।
দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে, নিজেরা সক্রিয়ভাবে পড়বে, শিখবে। দলগত কাজ করে আবার তা মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার ষান্মাসিক মূল্যায়ন ও বার্ষিক মূল্যয়নও হবে। কাজের পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়া আছে। শুধু তাই নয়, সাতটি স্কেলে শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট কার্ডও হবে।