ক্লেশ
# তিতাস
মাঝরাতে হঠাৎ দীপুর চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে তার বাবা মা দৌড়ে এলেন। কিছুদিন আগে বন্ধুদের সাথে সিকিম বেরিয়ে আসার পর থেকে সে আর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে শুচ্ছেনা। তাই ওনাদের ঘরে ঢুকতে কোন অসুবিধা হলো না।
ভেতরে ঢুকে দেখেন দিপু বাম হাত দিতে ডান হাত টা জোরে চেপে আছে আর বলছে ভীষণ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না।
পরেরদিন সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তারবাবু দেখে তেমন কিছু বুঝলেন না। কিছু টেস্ট আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন টেস্টের রিপোর্ট দেখে উনি সঠিকটা জানাবেন।
বাড়ি ফিরে সব ঠিকই ছিলো কিন্তু আবার পরদিন রাতে সেই যন্ত্রণা সেই চিৎকার, ব্যথার ওষুধ খেয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
ডাক্তার বাবু এবার ঘুমের ওষুধও লিখে দিলেন তাতেও কোন সুরাহা হয় না। টেস্টের রিপোর্ট এলো তাতেও কিছু পাওয়া গেলো না সবই তো স্বাভাবিক অথচ যন্ত্রণা টা দিন দিন বাড়তেই থাকছে।
এখন তো শুধু রাতে নয় দিনের বেলায়ও যখন তখন ব্যথা শুরু হয়ে যায়। দীপুর মধ্যেও অনেক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এখন আর সে আগের মত বেশি কথা বলেনা, গান শোনেনা এমনকি নিজের ঘরের মধ্যেই যেন নিজেকে বন্দী করে রেখেছে।
এরই মধ্যে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে, অনেক টেস্ট, অনেক ওষুধ কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি।
ওদিকে বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন,আর কিছু পরিচিত মানুষের সাথে কথা বলে ওনারা সিদ্ধান্ত নিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। সেই দিন রাতে আবার বীভৎস এক চিৎকার শুনে দৌড়ে ওনারা দীপুর ঘরে ঢুকলেন কিন্তু আজ যেটা দেখলেন সেটা দেখে আঁতকে উঠলেন।
দেখলেন দীপু বাম হাতে একটা ছুরি নিয়ে ডান হাতের কব্জি হাতের তালুতে অনবরত আঘাত করে চলেছে আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার বিছানা।
তার বাবা ছুরিটা হাত থেকে কেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, মা কাঁদতে কাঁদতে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। দীপু তার মায়ের কানের কাছে বিড়বিড় করে কিছু বলতে বলতে জ্ঞান হারালো।
তার বাবা তাড়াতাড়ি করে এম্বুলেন্সে খবর দিলেন।
মা ছেলেকে কোলের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে বসে চুপ করে ছেলের বলা কথাগুলো ভেবে শিউরে উঠছিলেন ।
সে তখন বিড়বিড় করে বলেছিলো – আকাশ অনুকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছিলো, সারাক্ষণ অনুর আগেপিছে ওকে দেখা যাচ্ছিলো। আকাশ পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে যায়নি মা, আমি তো এই হাত দিয়ে ইচ্ছা করে ওকে ধাক্কা দিয়েছিলাম।।