অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর রহস্যজনক মৃত্যুতে বেশ সরগরম দেশের মিডিয়াঙ্গন। এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বারবার উঠে আসছে মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরের নাম। যিনি আত্মহত্যার সময় হিমুর বাসায় ছিলেন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ২০১৮ সালে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের মৃত্যুর সময়ও পাশে ছিলেন মিহির।
হিমু ও তাজিন দুজনেই একাকী জীবন যাপন করতেন। একাকিত্বে ভোগা অভিনেত্রীদের সঙ্গে মিহিরের সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ উঁকি দিয়েছে অনেকের মনে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে বলে কারো কারো ধারণা।
এসব বিষয়ের জবাব দিতেই সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুললেন মিহির। ফেসবুকে লাইভে এসে মিহির বলেন, ‘ফেসবুকে আমাকে নিয়ে ঝড় তুলছে মানুষ। আমি ড্রাগ-ডিলার হ্যান ত্যান অনেক কিছুই বলছে। আমাকে গ্রেফতার করা হয় না কেন প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আপনারা কি জানেন এই তিনদিন আমি কোথায় ছিলাম? হিমুকে হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে এই তিনদিন আমি থানায় বসে ছিলাম।’
ফেসবুকে লাইভে মিহির আরও বলেন, ‘শনিবার সকালে থানা থেকে আমাকে পুরান ঢাকায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠানো হয়। আমি তার সামনে স্টেটমেন্ট দিয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন। এস আই সাব্বির ভাই বলেছেন, আপনার কোনো কাজ নেই আপনি যেতে পারেন। তিনদিন ধরে আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে, আমার মোবাইল চেক করা হয়েছে। হাজারো প্রশ্ন করা হয়েছে। আর কি পুলিশ রিমান্ডে নেবে আমাকে? ফাঁসি দিয়ে দেবে? আমি কি অপরাধ করেছি?’
এ সময় হিমুর বাসায় থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে মিহির বলেন, ‘আমি হিমুর বাসায় ছিলাম এ কারণে আপনারা সন্দেহ করছেন? আমার কাজ বন্ধ। একটি সিরিয়াল করেছিলাম। ছয় মাস ধরে ঘোরাচ্ছে পারিশ্রমিক দিচ্ছে না। আমার বাসা ভাড়া বাকি। বাড়িওয়ালী বাসা তালা দিয়ে দিয়েছেন। আমি কোথায় যাব, কি খাব? সেজন্য আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। এমনিতেও আমি হিমুর বাসায় থাকতাম। কারণ আমি হিমুর মাকে মায়ের মতো জানতাম। হিমুর মা আমাকে বলেছেন, আমি না থাকলে আমার মেয়ের দেখাশোনা করিস। হিমু না খেয়ে অসুস্থাবস্থায় বাসায় কেঁদেছে তখন আমি বিকাশে টাকা পাঠিয়ে ওর জন্য খাবার পাঠিয়েছি।’
অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের ভাবিয়ে তোলে তাজিন আপার মৃত্যুর সময় আমি ছিলাম। হিমুর সময় আমি ছিলাম। এরা আমার নিকটাত্মীয়ের মতো। তাজিন আপা বলতেন যখন আমার বিয়ে হয়েছে সন্তান থাকলে সে মিহিরের সমান হতো। মিহির আমার ছেলের মতো। আমি ছিলাম বলেই তাজিন আপাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। নইলে সাতদিন পর তাজিন আপার লাশ বের করতে হতো। আমি না থাকলে হিমুকেও ঘরে তালাবন্দি করে রেখে তার প্রেমিক পালাত। অথচ কেউ বলছেন না, আমি না থাকলে তাজিন আপাকে তরতাজা দাফন করা যেত না, আমি না থকলে হিমুকে হাসপাতালে নিতে পারতাম না।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের হ্যাঙ্গারের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় হিমুর দেহ। এরপর মিহির, উরফি জিয়া ও বাড়ির দারোয়ান মিলে তাকে উত্তরায় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০০৫ সালে ছোটপর্দায় নাম লেখান হিমু। অল্পদিনেই লাভ করেন জনপ্রিয়তা। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’ উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন হিমু। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এ ছবিতে অরু চরিত্রে দেখা যায় তাকে।