সারাদেশে বিএনপি জামায়াতের ডাকা ৩য় দফা অবরোধের ২য় দিন চলছে। যা চলবে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। তবে চলমান অবরোধের মধ্যেই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি।
আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৫৭টি কেন্দ্রে ১লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৯ জন পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। সমন্বিত ১০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র অফিসারের (জেনারেল) ৯২২টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য এই নিয়োগ পরীক্ষা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চলমান অবরোধে দেশের প্রায় সব দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সারাদেশ থেকে রাজধানীর বাস টার্মিনাল গুলোতে যে বাস আসছে কিংবা রাজধানী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে তা খুবই নগণ্য। ফলে এই ১লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষার্থী কীভাবে শুক্রবারের পরীক্ষায় অংশ নেবে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
রংপুর থেকে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা সাখাওয়াত হোসেনের। তিনি ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে রংপুরের কামারপাড়া বাস স্ট্যান্ডে বসে ছিলাম। কিন্তু কোনও বাস পাইনি। ফলে বাসায় ফিরে যাই। ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্নে এই পরীক্ষা নিয়ে খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। যারা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কি অবরোধের বাস্তবতা জানে না নাকি তারা চান না আমরা পরীক্ষায় অংশ নেই।
সুনামগঞ্জ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসার কথা এমদাদুর রহমানের। তিনি ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমত বাস চলাচল করছে না। গতকাল অনেক কষ্টে সিলেটের এক আত্মীয়ের বাসায় এসে পৌঁছেছি। কিন্তু সিলেট থেকেও রাতে কোন বাস পাইনি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিকেলের ট্রেনে ঢাকা যাব। কিন্তু ট্রেনের ও টিকিট নেই। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে ঢাকা যেতে হবে। পরীক্ষার সময় যেহেতু ঘোষণা হয়েছে অংশ তো নিতেই হবে।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ফলে প্রশ্ন ওঠেছে তাহলে কি ৬-৯টা এই ৩ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা এসে পরীক্ষায় অংশ নেবেন পরীক্ষার্থীরা?
রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় কথা হয় ঝিনাইদহের ইমরান হোসেনের সাথে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, অবরোধেও পরীক্ষা নেওয়া হবে এমন ঘোষণা শুনে গত সোমবার এক বন্ধুর বাসায় চলে এসেছি। কাল পরীক্ষা দিয়ে তারপর বাসায় যাব।কেবল আমি একা নয় আমার অনেক বন্ধুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলেও ঢাকায় থাকা আত্মীয় স্বজনের বাসায় পরীক্ষায় অংশ নিতে আগে থেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা যায়, অবরোধের কারণে ৮ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা স্থগিত কিংবা নতুন তারিখ ঘোষণা করতে নারাজ সমন্বিত ১০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের (বিএসসিএস) পরিচালক মো. সাঈদুর রহমান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পরীক্ষার আসনবিন্যাস প্রকাশ করা হয়েছে। নির্ধারিত তারিখেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১০ নভেম্বর সকাল ১০-১১ টা পর্যন্ত সিনিয়র অফিসার পদে প্রিলিমিনারী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
হাসিবুর রহমান লিওন নামের এক পরীক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘পরীক্ষা এখন পলিটিকাল ব্যাপার। যদি নেয়, এখানেও স্বার্থ। না নেয়, অন্যদের স্বার্থ হাসিল হয়। আমরা হইলাম ফুটবল, দুই পাশের লাথি খাবো। এক্সাম দিতে এসে মরলেও আমরা মরবো, তারা কেউ মরবে না।’
অধরা নামের একজন লিখেন, ‘সব জেলায় কি ট্রেন সুবিধা আছে? এমন জেলাতে থাকি যেখানে ট্রেনের সুবিধা নেই, কিভাবে এই এক্সামে এ্যাটেন্ড করবো? পরীক্ষায় তো এ্যাপ্লাই করেছি অংশগ্রহণের জন্যই। কিন্তু কেনও সবাই এই অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে? আমরা বাসে যাতায়াত করি, তাহলে সড়কপথের যাতায়াতের গ্যারান্টি দেন, বাস চলবে, আমরাও নিশ্চিন্তে চলে যাবো। কেনো আমাদের নিয়ে এমন তামাশা? বারবার কাউন্টারে ফোন দিচ্ছি, তারা বলছে বাস চলবে না। অবস্থা এমন মনে হচ্ছে, যেন ঢাকার স্টুডেন্টদের অলিখিতভাবে চাকরির ব্যবস্থাটা করে দেয়া হচ্ছে। আজ খুব অসহায় লাগছে। চাকরির বয়স তো আর বাড়াবে না, আবার এ্যাপ্লাই করেও সুযোগ পাবো না অংশগ্রহণের। বাহ!’
আহসান কবির নিঝুম লিখেন, ‘আগামী ১০ তারিখ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি এই অবরোধের মধ্যে একটা এক্সাম দিয়েছে। এটা নিয়ে ঢাকার বাহিরে ও ঢাকার মধ্যে থাকা এপ্লিক্যান্টদের মধ্যে দুই ভাগ। ঢাকায় যারা থাকেন তারা পরীক্ষার পক্ষে তারা একবার ও ঢাকার বাহিরের পরীক্ষার্থী কিভাবে ঢাকা পৌঁছাবে এটা নিয়ে একবার ও ভাবছে না। সামগ্রিক ভাবে এটাই আমাদের সমাজে শিক্ষিত ও দায়িত্বশীল মানুষের চরিত্র।’