বগুড়ার শেরপুরে অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিলকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। নাশকতা এড়াতে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা শহরে টহল দিচ্ছেন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডের সিঅ্যান্ডবি কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা, এস আই হাসান আলী, কনস্টেবল মো. শামীম হাসান, মো. রেজাউল করিম ও আফজাল হোসেন। এছাড়া, আহত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধের সমর্থনে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন শেরপুর-ধুনট আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। মিছিলটি শহরের ধুনট মোড় এলাকার দিকে যাচ্ছিল। একই সময় ওই বাসস্ট্যান্ডের দলীয় কার্যালয় থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি শান্তি মিছিল বের হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজামাল সিরাজী, আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মিছিলটি বিএনপির পেছনে পেছনে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে শহরের খেজুরতলা নামক পৌঁছালে অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে শ্লোগান দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষই মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি শ্লোগান দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাথর নিক্ষেপ। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরবর্তীতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ত্রিমুখী এই সংঘর্ষ প্রায় ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী ছিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের শান্তি মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, অবরোধের সমর্থনে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করি। মিছিলটি কয়েকশ’ গজ যেতে না যেতেই কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সেই সঙ্গে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় বিএনপির একজন কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ভাঙচুর করা হয়।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিক হাসান সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, এ সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় আমিসহ পুলিশের পাঁচজন আহত হয়েছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।