বিএনপি-জামায়াতের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা করা হচ্ছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে এসব নাশকতা হলেও পুলিশের তৎপরতার কারণে বড় ধরনের কোনো নাশকতা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিস্ফোরক বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকা থেকে ৮ জন, শাহআলী থেকে ১ জন ও শাহবাগ এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মাহফুজ হোসেন মুনা (২০), মো. ইয়াছিন (১৯), মো. ফরহাদ (১৯), মো. মাহি (১৮), মো. আউলাদ হোসেন (১৮), মো. নাছিম (১৮), মো. আমজাদ আলী হোসেন (১৮), মো. তানভীর হোসেন (১৮), মো. নিজাম উদ্দিন জসিম, নূর মোহাম্মদ শিকদার (২৩), মোহাম্মদ বখতিয়ার চৌধুরী ওরফে শাহীন (২৪) ও মো. রুবেল (২০)।
এদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন জসিম রূপনগর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গ্রেপ্তার বাকিরাও অবরোধের কর্মসূচির সমর্থক, তবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ডিএমপি সভা সমাবেশসহ ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে অনেক আন্তরিক। গত ৪ মাস ধরে ঢাকায় রাজনৈতিক-সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে ডিএমপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরেও আমাদেরকে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।
আমরা বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরক জাতীয় বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছি। গতকাল ভাসানটেকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিস্ফোরক সামগ্রীসহ জমায়েত হওয়া ৮ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে যত পরিমাণ নাশকতাসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে, সেসব ব্যবহার করতে পারলে নাশকতা ব্যাপকতা আরও বাড়তে পারত।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বচনের তপশিল ঘোষণার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে নাশকতার প্রয়াস বেড়েছে। কয়েকটি এলাকায় ককটেল ছুড়ে মেরেছে, তবে পুলিশি তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঢাকার নিরাপত্তার প্রচেষ্টা সুদৃঢ় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আগামী দিনগুলো এ ধরনের নাশকতার চেষ্টা করলে ডিএমপি পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা প্রদান করবে।
গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তারা সবাই অবরোধের সমর্থনে এসেছে, তবে আমরা প্রত্যেকের পদবি যাচাই-বাছাই করছি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ৪-৫ হাজার বাস চলাচল করে, লাখ লাখ যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে কিছু যানবাহন যত্রতত্র পার্কিং করা থাকে। অরক্ষিতভাবে অনেক জায়গায় যে গাড়িগুলো থাকে, নাশকতাকারীরা এ সুযোগটা নেয়। তবে নাশকতা যেটি করেছে, সেটা তাদের প্রচেষ্টা বা উদ্যোগের চেয়ে কম।
তবে চোরাগুপ্তা হামলার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ। আমাদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টাই ডেপ্লয়মেন্ট করা থাকে। আমাদের সব অফিসাররাও চেষ্টা করছে নাশকতা মিনিমাইজ করার জন্য।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, শহরে যে পরিমাণ যানবাহন সে পরিমাণ পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যদি সিকিউরড জায়গায় পার্কিং সিস্টেম থাকত তাহলে এক জায়গায় আমরা নিরাপত্তা দিয়ে রাখতাম। কিন্তু গাড়িগুলো ছড়ানো-ছিটানো থাকে, আর তারা সুযোগটা নেয়। এরপরেও আমরা ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছি, এটা সহজ কাজ নয়।
বিস্ফোরকসামগ্রী কোথা থেকে সংগ্রহ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা জোগাড় করতে চায় তারা ঝুঁকি নিয়েও জোগাড় করে। এরপরেও আমরা লুজ পেট্রল বিক্রির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। বিভিন্ন কেমিক্যাল যেগুলো গার্মেন্টসে ব্যবহার করা হয়, দেখা গেছে তারা সেগুলো কোনোভাবে সংগ্রহ করে বিভিন্ন সামগ্রী মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করে।
বাসগুলোর নিরাপত্তায় নির্ধারিত স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। তারপরেও বাস্তবতা দেখেন। ঢাকায় যে পরিমাণ মানুষ সে পরিমাণ জায়গা নেই। পর্যাপ্ত পার্কিং সিস্টেম নেই স্বীকার করতেই হবে। বড় টার্মিনালে অনেক বাস থাকেই। তারপরেও সাড়ে চার হাজার ৫ হাজার বাস চলাচল করে, যেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং নেই। তবে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএমপি ৩৬৫ দিনই চ্যালেঞ্জের মধ্য থেকে কাজ করে। কখনো তীব্রতা হয়তো কম থাকে। নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার, বিভিন্ন স্পেলে সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।