পুস্তক পর্যালোচনা : ‘অদম্য এক মনোয়ার হোসেন ‘
জিয়া হাবীব আহসান, এডভোকেট
সম্প্রতি প্রকাশিত “অদম্য এক মনোয়ার হোসেন” অমূল্য গ্রন্থটির ২য় সংস্করণ বাজারে এসেছে । বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনবিদ ইংল্যান্ডের লিংকন্স ইন এর সদস্য ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন ভাইকে নিয়ে এক চমৎকার প্রকাশনাটির এককপি উপহার পেলাম। তাঁর ছোটভাই বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন ল স্পেশালিষ্ট এস এম ইকবাল জামিলকে দিয়ে সরসরি এটা পাঠানোর জন্যে কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁকে।সাথে সাথে মূল্যবান বইটির ২য় সংস্করণ নিয়ে দুকলম রিভিউ লিখার প্রয়োজন অনুভব করি। বইটিতে তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে চট্টগ্রাম ও দেশের সমসাময়িক কালের ও সময়ের ইতিহাস ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে।চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের এটটি চমৎকার চিত্র উঠে এসেছে। যা ইতিহাসের মূল্যবান দলিল হিসেবে নজির হয়ে থাকবে। বরেণ্য আইনবিদ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনকে একজন অধিকার কর্মী হিসেবে শ্রদ্ধা করি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংগ্রাম আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক। একজন সফল খ্যাতিমান ইমিগ্রেশন লইয়ার হিসেবে এদেশের বহু শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্য ইউরোপে লেখাপড়া বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় আর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতিতে থেকে ‘ ৮৩ হতে ‘৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার ও শিক্ষার অধিকার আদায়ের ছাত্র গণ আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকার কারণে তাঁকে দুবার দীর্ঘ দিন কারাগারে বিনাবিচারে আটক রাখা হয়েছিলো । গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয় অসংখ্য বার। রাজনীতিতে কখনও বর্ণচোরা, সুবিধাবাদী ছিলেন না বলেই তাঁর দলীয় কর্মী না হওয়া সত্বেও তাঁকে পছন্দ করি। সব দলের নেতা কর্মীদের সাথে উদার- সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রেখে তিনি চেষ্টা করেছেন রাজনীতিতে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করতে। মুক্ত চিন্তা পরমত সহনশীলতার কারনে সকলের প্রিয় মানুষে পরিণত হোন তিনি । সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী চট্টগ্রাম উন্নয়নের আন্দোলন মোটামুটি সফল করে আর জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামের প্রতি সরকারগুলোর অবহেলার বিরুদ্ধে টনক নাড়িয়ে ১৯৯৪ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান । সুবিধাবাদী ও অর্থ নির্ভর রাজনীতির প্রতি অনেকটা বিতশ্রদ্ধ হয়েই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ।
ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিষ্টার হয়েছেন।তবে সেখানে প্র্যাকটিসিং ব্যারিষ্টার যোগ্যতা অর্জন অনেক কঠিন । অন্যান্য দেশের ছাড়াও ১০ হাজারেরও বেশী বাংলাদেশী মানুষকে সব পর্যায়ের আদালতে আপীল বা হোম অফিসে আবেদন সফল করে আইনী সেবা দিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি । এরা প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন । এই সফলদের কয়েক ডজনের মন্তব্য বইতে আছে যেগুলি পড়লে বুঝা যায় পেশাগতভাবে তাদের বিষয়গুলি কত চালেন্জিং ছিলো । একটা ফাইল বা মামলা সফল হওয়া মানেই একটা মানুষের বা পরিবারের জীবন বদল করে দেয়া । অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ত্যাগ দিয়ে তিনি প্রতিটি মামলা ও আবেদন সফল করতে কাজ করেন বলেই আন্তর্জাতিকভাবে আইন পেশায় সুনাম অর্জন করতে পেরেছেন মনোয়ার ভাই । পেশাগত সফলতার জন্য হুজ হু বাংলাদেশ, বৃটিশ-বাংলাদেশী বিজনেস এওয়ার্ডসহ
সহ কয়েকটা সম্মাননা পেয়েছেন | মাশাআল্লাহ ।
চট্টলার দূঃখ চাক্তাইখাল আর জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন নিয়ে সর্বদা সোচ্চার কন্ঠ। যেখানেই গিয়েছেন দেশ আর বীর চট্টলার মানুষের কথা, উন্নয়ন এর কথা, নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার এর কথা বলেছেন। গড়ে তুলেছেন নির্দলীয় সংগঠন “নাগরিক ফোরাম”। তাঁকে নিয়ে কিছু শব্দ চয়ন আমারো ছিল,যা ছাপালে খুবই ভালো লাগতো। তবুও বলি প্রিয় শিল্পী ও চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বড়োভাই শাহরিয়ার খালেদ ভাইয়ের উদ্যোগে ও দক্ষ সম্পাদনায় প্রকাশনাটি ইতিহাসের পাতায় উভয়কে অমর করে রাখবে। শ্রদ্ধা ভালোবাসার মানুষ গুলো বেঁচে থাক, মানবতার সেবায়।গুণি মানুষের কদর ও মূল্যায়ন আরো বেশি গুণধর সৃষ্টি করে।বিশেষ করে খড়িমাটি প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মনিরুল মনির কে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই সুন্দর কষ্টসাধ্য একটা প্রকাশনা উপহার দেয়ার জন্যে।অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির অভিব্যাক্তি ও অনুভূতির প্রকাশ বইটিকে সমসাময়িক সময়ে অনবদ্য আলোতে আলোকিত আর সমৃদ্ধ করেছে।৪১৬ পৃষ্ঠার মজবুত আধুনিক মলাট ও বাঁধাই এর চমৎকার গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন স্বয়ং প্রকাশক মনিরুল মনির। “অদম্য এক মনোয়ার” সুন্দর নামকরনের কারনে এর প্রতি আরো আকৃষ্ট হচ্ছেন পাঠক সম্প্রদায়। বইটির জম কালো প্রকাশনা উৎসবই প্রমান করে এর প্রকাশ কত জরুরি ছিল। আর বইটি প্রাপ্তিস্থান খড়িমাটি প্রকাশনার সাথে অথবা চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম, ৪ তলা, হাইওয়ে প্লাজা, লালখানবাজার এই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে। ( ফোন ০১৭১১৯০৩২১২ওয়েবসাইট www.kharimati.com).বইটির গায়ের মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৪০০/- টাকা।
স্বনামধন্য ও বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা খড়িমাটি বইটি প্রকাশে দক্ষতা,যোগ্যতা ও রুচিবোধের পরিচয় দিয়েছে। আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড.অনুপম সেন স্যার,বিশিস্ট শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট প্রফেসর শায়েস্তা খান,চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, জননেতা আব্দূল্লাহ আল নোমান, প্রফেসর আব্দূল মান্নান স্যার, প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সহ ৩৬ জন বিশিস্ট ব্যাক্তিত্ব তাঁর উপর এই সম্মাননা বইতে মন্তব্য করেছেন। যাঁদের লিখা বা মন্তব্য আছে তাঁদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা,তাদের মূল্যবান মূল্যায়ন সমাজে গুণি মানুষ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে,ইনশাআল্লাহ । এখানে তাঁদের নামসহ বইয়ের সূচীপত্রটি আছে ।কোন মানুষকে মূল্যায়ন করা কঠিন কিছু নয়, যদি আপনার মনটি সাদা হয় । দলমতের উর্ধ্বে থেকে করা ইতিবাচক মূল্যায়নগুলি পড়ে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না।এঁদের মধ্যে রয়েছেন আমাদের শিক্ষক, দেশের অন্যতম সেরা বুদ্ধিজীবী, কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান উপাচার্য, রাজনৈতিক নেতা,মনোয়ার ভাইয়ের বাল্যকালের বন্ধু,শিক্ষাগুরু,আইনবিদ, সাংবাদিক, শব্দ সৈনিক, এমনকি তাঁর পেশাগত ক্লায়েন্ট সহ নানা শ্রেণির বোদ্ধা লেখক পাঠক, গুণি মানুষ জন । সংবাদপত্রের অনেক বছরের পুরনো প্রকাশিত সংবাদ-চিত্র সমৃদ্ধ তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি ছবির এলবামও আছে।ইংরেজীতে দুইটা মূল্যবান আর্টিকেলস আছে, একটা ছবিগুলোর আগে আর একটা ছবিগুলোর পরে। এছাড়াও ইংলিশে এডিটোরিয়াল লেখা আছে। দ্বিতীয় সংস্করণের সময় এগুলো আরো অর্গানাইজ করা হয়েছে।পূরো বইটির ইংলিশ ভার্সন করতে পারলে বিদেশিদের কাছেও এ মানুষটির কর্ম স্পৃহা তুলে ধরা যাবে।
সম্পাদক প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী ও সাংস্কৃতিক যোদ্ধা শাহরিয়ার খালেদক ভাইকে আবারো অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।পুস্তকটি আরো আরো মনোয়ার হোসেন সৃষ্টির প্রেরণা যোগাবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এর বহুল প্রচার প্রত্যাশা করি।
জিয়া হাবীব আহসান, এডভোকেট