চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম। এবারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ; আর জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৯ পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে,তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রাঙ্গামাটি।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বেলা পৌনে ২ টায় নগরের ষোলোশহর এলাকায় অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মিলনায়তনে এ ফলাফল প্রকাশ করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান।
সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ
শতভাগ পাস না করলেও এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সেরা দশের তালিকার শীর্ষে সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ। এ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১ হাজার ৬৫২ জন শিক্ষার্থী। ৯৮ শতাংশ পাস করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৬৮ জন। গতবার যেখানে পেয়েছিল ১ হাজার ৩৩৪ জন।
চট্টগ্রাম কলেজ
শতভাগ পাস এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে প্রথম অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ পরপর তিন বছর ধরে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের এবারের অবস্থান দ্বিতীয়। এ অবস্থানে থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৪৬ জন। গতবার যেখানে ছিল ৮৬০ জন। এবারও শতভাগ পাস করতে পারেনি এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এবার এ কলেজের ১ হাজার ২৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে ৯৯ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে সরকারি এই কলেজটি। গত দুইবার জিপিএ-৫ এর দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এই কলেজ। এবার ২ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৯৮ দশমিক ০২ শতাংশ পাস করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৭৬ জন। যেখানে গতবার ছিল ১ হাজার ১৬৯ জন।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ
গতবার ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ এবার রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। ৪০৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের। গতবার জিপিএ ৫ পায় ৬৩৬ জন। তাদের ১ হাজার ৬৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ১ হাজার ৫৭ জন পাস করেছে। যা শতকরায় ৯৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সরকারি কর্মাস কলেজ
এবারও জিপিএ ৫ এর দিকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সরকারি কমার্স কলেজ। এ কলেজের ৮৭০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৮৬৬ জন। যা ৯৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তারমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬৬ জন। গতবার এ প্রতিষ্ঠানের ৬৯৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল।
চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ
গতবার চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এবার ষষ্ঠ অবস্থানে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ। এ কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৩২৩ জন। ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ পাস করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫৫ জন। যেখানে গতবার পেয়েছিল ৭৬১ জন।
বাকলিয়া সরকারি কলেজ
জিপিএ-৫ এর দিকে গতবার সেরা দশের অষ্টম অবস্থানে থাকা বাকলিয়া সরকারি কলেজ এবার রয়েছে সপ্তম অবস্থানে। এ কলেজ থেকে ১ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ হাজার ২২৬ জন। যা শতকরায় ৯২ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৮ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৮৮ জন শিক্ষার্থী।
হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ
জিপিএ ৫ এর থেকে রয়েছে অষ্টম অবস্থানে এই কলেজ। যদিও গতবার ছিল সপ্তম অবস্থানে। তাদের ১ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ হাজার ৫৬৭ জন। যা ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮১ জন। যেখানে গতবার পেয়েছিল ৫৬৪ জন।
পটিয়া সরকারি কলেজ
জিপিএ-৫ এ দিক থেকে গতবার সেরা দশের তালিকায় থাকা পটিয়া সরকারি কলেজ এবার নবম অবস্থানে। তাদের ১ হাজার ৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯৬৩ জন শিক্ষার্থী এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৬১ জন। যেখানে গতবার এই কলেজের ৩৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিল।
ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ
জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ। শতভাগ পাস করে এ কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩২৬ জন শিক্ষার্থী। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫৯ জন।
২০২৩ সালের চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় এ বছর অংশ নিয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ জন। যার মধ্যে পাস করেছে ৭৫ হাজার ৯০৩ জন এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৩৩৯ জন।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোতেই পিছিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড
এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোটেই পিছিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা৷ এবার মোট পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্থাৎ এবার কমেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ এ এগিয়ে ছাত্রীরা। মোট ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ জন। মোট ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৮৫ জন।
বিজ্ঞান বিভাগে এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৪৫, মানবিকে ৬৫ দশমিক ২২, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম নগরীর পাসের হার ৮৫ দশমিক ১৯। নগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৬। অন্যদিকে কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এবার উপস্থিত ছাত্রীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৬৩৯, ছাত্র ৪৭ হাজার ৩১০। ছাত্রীর পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৩, যা গতবছর ছিল ৮২ দশমিক ৯২ শতাংশ৷ ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ২৪। যা গতবছর ছিল ৭৭ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন ১৫ হাজার ৯১২ জন। এক বিষয়ে অকৃতকার্যের হার ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। এবার চট্টগ্রামে শতভাগ পাস করা মোট কলেজের সংখ্যা ১২টি। যা গত বছর ছিল ১৬টি কলেজ।