প্রবীণ সাংবাদিক, সংবাদপত্রসেবী ও লেখক আনোয়ারুল আলমের মৃত্যুতে সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরাম এর উদ্যোগে ৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস. রহমান হলে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরাম আহ্বায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস্ নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, প্রবীণ সাংবাদিক নেতা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকে সম্মানিত বুদ্ধিজীবী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে সম্মানিত বুদ্ধিজীবী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন।
অতিথি ছিলেন একুশে পদকে সম্মানিত দৈনিক আমাদের সময় সম্পাদক অধ্যাপক আবুল মোমেন ও কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সালাউদ্দিন মো. রেজা, সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক। সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরাম সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সম্পাদক স.ম. ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে মুনাজাত পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। মরহুম সাংবাদিক আনোয়ারুল আলমের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন মরহুমের পুত্র মুনতাসির আলম। মরহুম সাংবাদিক আনোয়ারুল আলম এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম. নাছিরুল হক, সাবেক সভাপতি অঞ্জন কুমার সেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মুজাহিদুল ইসলাম, ইতিহাসের খসড়া সম্পাদক শামসুল হক প্রমুখ। স্মরণসভায় বিপুল সংখ্যাক সাংবাদিক ও পেশাজীবী উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণসভায় বিভিন্ন বক্তা বলেন, আনোয়ারুল আলম জীবন যুদ্ধে লড়াই করে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের সেবা করেছিলেন। তখন সাংবাদিকতা ছিল দেশ সেবার ব্রত, সংবাদপত্র ছিল মিশন। ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করা ছাড়া সাংবাদিকতা লাভজনক বা জীবন চলার মত আয়-রোজগারের কোন পেশা ছিল না। যাঁরা সাংবাদিকতা করেছেন বা সংবাদপত্র প্রকাশ করেছেন প্রায় সকলেই কষ্টের জীবন কাটিয়েছেন। চেতনার দিক থেকে মাহবুব উল আলম, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের অনুসারী ছিলেন আনোয়ারুল আলম। তৎসময়ে বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট থাকা সত্বেও আনোয়ারুল আলম তা ত্যাগ করে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত হয়ে দেশ ও গণমানুষের কল্যাণের কাজে সংবাদপত্রের সেবা করে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সেই সময়ে চট্টগ্রামের সংবাদপত্রকে এগিয়ে নিতে যাঁরা স্তম্ভ হিসেবে ছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন আনোয়ারুল আলম। কাদেরী শওকত দুঃখ করে বলেন, যাঁদের ত্যাগ, অবদান, ব্যক্তিত্ব সমীহ ও সম্ভ্রমের কারণ ছিল তাদের সকলেই প্রায় অন্তর্হিত। বেশির ভাগই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, মারা গিয়েছেন। কেউ কেউ বেঁচে থাকলেও চলমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিজেদের দিকবালচক্রে হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের সহযোগিতা ও পরামর্শ থেকে আজ আমরা বঞ্চিত। সাংবাদিক আনোয়ারুল আলম চলমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিজেকে ঘুটিয়ে রেখেছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ সংবাদপত্র সংগঠক। সাংবাদিকদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন ছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করতেন। সাংবাদিক দরদী ও বান্ধব ছিলেন। গুণী ব্যক্তি ছিলেন। যে সকল সাংবাদিক আজ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত তাঁদের অনেককেই তিনি হাত ধরে এ পেশায় এনেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ভাল সাচ্চা ভদ্রলোক। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত আলম পরিবারের সন্তান ছিলেন। উপমহাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় যে পরিবারের অবদান উজ্জ্বল হয়ে আছে।
স্মরণসভা শেষে মরহুম সাংবাদিক আনোয়ারুল আলমের ইছালে সওয়াবের নিয়তে উপস্থিত সকলকে পরিবারের পক্ষ থেকে মেহমানদারি করা হয়।