বাংলাদেশে ভীতিমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় জাতিসংঘ। তা না হলে নির্বাচনের পর জাতিসংঘের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্থোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে সরকারের অনঢ় অবস্থানে জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যক্তিগত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবেন কিনা’—এমন প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন মুখপাত্র ডুজারিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হলো, সেটি নিয়ে জাতিসংঘের অবশ্যই কথা থাকতে পারে।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট বলছে— বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার আগামী ৭ জানুয়ারি আরেকটি নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীকে জেলে আটকে রেখেই এই নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে। ভয়েস অব আমেরিকার ইংরেজি সার্ভিসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে— বিগত দুই সপ্তাহে কারা হেফাজতে ৬ জন বিরোধী দলের কর্মী প্রাণ হারিয়েছে। চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যেও আপনি কী এখনো অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করবেন, নাকি জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরায় ফিরিয়ে আনতে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যেগ গ্রহণ করবেন? গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ভূমিকা রাখে সে অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণ’।
ওই প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন ইস্যুতে জাতিসংঘের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ডুজারিক বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে আগেও আলোচনা করেছি এবং আপনিও উল্লেখ করেছেন যে, আমরা এমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণ কোনো ভীতি প্রদর্শনের আশঙ্কা ছাড়াই তাদের ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে’।
এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা হলো, সেটি নিয়ে নির্বাচন শেষে জাতিসংঘ অবশ্যই অবস্থান জানাতে পারে। তবে আমাদের অবস্থানের কোনো নড়চড় হয়নি’।
ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকাগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। যে ঘটনায় একজন নারী ও তিন বছরের এক শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যায়। প্রাক-সাধারণ নির্বাচনের সময় এই ধরনের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আপনি কি উদ্বিগ্ন?
জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত সবার প্রতি সমবেদনা জানাই। আমি মনে করি উৎসের সম্পূর্ণ তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
এর আগে, গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের কাছে একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে মিলার বলেন, আমি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর ৫টায় ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মা ও শিশুসন্তানসহ চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নাদিয়া আক্তার পপি (৩৫) ও তার শিশুসন্তান ইয়াসিন (৩)।
আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সকাল পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।