আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তুলেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি। তবে সংস্থাটির এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমন অভিযোগ তোলায় সিপিডির তীব্র সমালোচনা করে ওই টাকার সন্ধান চেয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সিপিডি অনিয়মের অভিযোগ তোলায় তাদেরই বলতে হবে সেই টাকাগুলো কোথায় আছে। তারা বিস্তারিত তথ্য দিলে আমরা সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনবো।’
সিপিডির রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই রিপোর্ট কে দিয়েছে? দেবপ্রিয়ই (ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য) দিক বা মুস্তাফিজই (অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান) দিক, আমার বক্তব্য হচ্ছে এই টাকাগুলো কোথায় গেছে? আপনারা টাকার সন্ধান দেন, আমরা টাকাগুলো ফিরিয়ে আনতে চাই।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর (শনিবার) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি ব্যাংকে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এই সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই হিসাব দেয় সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে সিপিডি জানায়, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। গত ১৫ বছরে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এসময় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের নামে যদি কেউ সংঘাত তৈরি করে, বিশৃঙ্খলা করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমরা দলীয়ভাবে চাইবো। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। এখানে কে দলীয় প্রার্থী আর কে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেটা আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একটা নির্বাচন হলে সেখানে সংঘাত একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের কোনো সংঘাতের শঙ্কা দেখছি না। এসব বিশৃঙ্খলা-সংঘাতের বিষয়ে আমাদের সভানেত্রীর জিরো টলারেন্স।’
সম্প্রতি সংখ্যালঘুর ওপর হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল। তারা আমাদের নাগরিক, আমাদের ভোটার। এমনকি তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও বড় ভূমিকা আছে। আমরা তাদের ভিন্ন কোনও চোখে দেখি না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও উপদফতর সায়েম খান প্রমুখ।