শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মাছ, মুরগি ও সবজির দাম

ভরা মৌসুমে প্রচুর সরবরাহ থাকার পরেও লাগামহীন হয়ে পড়েছে শীতকালীন সবজির বাজার। ৬০ টাকার নিচে বাজারে তেমন কোনো সবজি নেই বললেই চলে। বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ-মাংস। মৌসুম শুরু হলেও কিছুতেই কমছে না আলু ও পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের তুলনার ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারঘুরে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। যা গত সপ্তাহে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালি, সোনালি হাইব্রিড ও লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে। সোনালি ৩২০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি, লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়া বাজারের মুরগি বিক্রেতা সজিব বলেন, গত এক মাস ধরে মুরগির বাজার বাড়তি রয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই মুরগির দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।

চলতি সপ্তাহে এসব বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমেছে। পেঁয়াজ দেশি (পুরাতন) ১৩০ টাকা, দেশি নতুন পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়া বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আরমান বলেন, গত সপ্তাহে দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, দেশি নতুন পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কমেছে। শুধু তাই নয় নতুন আলুও কেজিতে ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

এসব বাজারে শীতকালীন সবজি দাম বেড়েছে। শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ সকল ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।

রাজধানীর মহাখালীর বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মিজান শেখ বলেন, বাজারে আসলে অতিরিক্ত দামের কারণে কোন মাছই কেনা যায় না। গরিবের মাছ তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কইয়ের দামও চড়া। আর অন্য কোনো মাছ তা কেনার কথা ভাবাই যায় না। এখন পাঙাশ মাছও কেজি ২২০/২৪০ টাকা করে কিনতে হয়।

মালিবাগে বাজারে মাছ কিনতে আসা কবির হোসেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। তিনি বলেন, ইদানীং বাজারে এলে মাছ কিনতে পারি না বাড়তি দামের কারণে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছও এখন বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। দরদাম করে সবশেষে তেলাপিয়া মাছ কিনলাম তাও ২২০ টাকা কেজি দরে। এই বছর কোনো সময়ের জন্যই কোনো মাছের দাম কমেনি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষরা কোনো মাছই এখন সেভাবে কিনতে পারছি না।

এদিকে মাছের বাড়তি দামের বিষয়ে গুলশান-সংলগ্ন লেকপাড় বাজারের বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সব ধরনের মাছের দাম চড়া যাচ্ছে। এ ছাড়া মাঝে হরতাল অবরোধের কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছিল। এরপর থেকে দাম নতুন করে কমেনি।

তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজারেই আমাদের সব ধরনের মাছ বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এরপর পরিবহন খরচ, শ্রমিক খরচ, রাস্তা খরচ, দোকান ভাড়া সব মিলিয়ে দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেশিই যাচ্ছে। আমাদের মাছ কেনা যখন কম দামে পড়বে তখন আমরাও খুচরা বাজারে কম দামেই বিক্রি করতে পারব।

বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধা কপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা এবং গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার এসব বাজারে বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, নতুন আলু ৭০ টাকা, নতুন উঠা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা দরে, পেঁয়াজের ফুলকলি ৬০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১০টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৫৮০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২০০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকায়। তবে গত সপ্তাহে লাল ডিম ১২০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে।

এসব বাজারে গরুর মাংসের দাম কিছুটা কম থাকায় মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা , মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৯০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ৯০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, কাচকি মাছ ৬০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১০০০ টাকা, বাইম মাছ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, দেশি কই ১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৭৬০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০টাকা, আড়ই মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন