আজ ৩১ শে ডিসেম্বর। চট্টগ্রাম ও শিশু হাসপাতালের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের আজকের এই দিনে চট্টগ্রামের কিছু মহৎপ্রাণ সমাজ হিতৈষি ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ উপলক্ষে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রাথমিকভাবে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে শুধুমাত্র শিশু স্বাস্থ্য বহির্বিভাগের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি একটি বিশাল মহীরুহ হিসেবে চট্টগ্রামের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল আজ চট্টগ্রামবাসীর ভালোবাসা, আস্তা ও বিশ্বাসের ঠিকানা। করোনাকালে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল আরেকবার চট্টগ্রামবাসীর আস্তা ও বিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছে। করোনাকালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভূমিকা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেকোন মহামারীতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল অতীতের ন্যায় চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ৯৫০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি ও এএমইউ সার্ভিস, ব্লাড ব্যাংক, লাশবাহী ফ্রিজার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, সাধারণ এ্যাম্বুলেন্স ও আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং ল্যাবরেটরী সার্ভিস সহ জরুরী সেবা সমূহ চালু রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে নিম্নবর্ণিত প্রকল্প সমূহ অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
১. চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল (৯৫০ শয্যা বিশিষ্ট)।
২. চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ।
৩. চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল ইনষ্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ।
৪. চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল নার্সিং ইনষ্টিটিউট।
৫. চমাশিহা শামসুন নাহার খান নার্সিং কলেজ।
৬. চমাশিহা অটিজম এন্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।
৭. চমাশিহা ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার (সম্প্রতি উদ্ভেধন করা হয়েছে)।
৮. চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট (আগামী ২০২৪ শিক্ষার্বষ থেকে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে)।
৯. প্রস্তাবিত – বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বৃদ্ধ নিবাস, রাউজান পৌরসভা, চট্টগ্রাম।
১০. প্রস্তাবিত – সায়মা ওয়াজেদ অটিজমহোম এন্ড ইনষ্টিটিউট, রাউজান পৌরসভা, চট্টগ্রাম।
১১. প্রস্তাবিত- চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল বিশ্ববিদ্যালয়।
১২. প্রস্তাবিত – চমাশিহা নিওরোসাইন্স ইনষ্টিটিউট।
নতুন হাসপাতাল ভবন: আমাদের স্বপ্নের মেগা প্রকল্প ১৩ তলা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল ভবনের নিমার্ণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ১১ তলা পযর্šÍ নিমার্ণ কাজ শেষে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ সমূহ চালু করা হয়েছে। বাকী কাজ সমূহ আগামী ১/২ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে আমরা নতুন ভবনে ৯টি ও-টিসহ অত্যাধুনিক অপারেশন টিয়েটার কমপ্লেক্স চালু করা হয়েছে। এছাড়া নতুন ভবনে ৪২ শয্যার এনআইসিইউ সহ ৮২ শয্যার অত্যাধুনিক নিউনেটাল ওর্য়াড, ৫০ শয্যার শিশু আইসিইউ ওর্য়াড, ৩০ শয্যার অত্যাধুনিক আইসিইউ, ক্যাথল্যাবসহ ৩৪ শয্যার সিসিইউ, অত্যাধুনিক লেবার কমপ্লেক্সসহ গাইনী ওর্য়াড চালু করা হয়েছে। নতুন ভবনে ৮তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত মোট ৯২টি কেবিন চালু করা হয়েছে। এছাড়া পুরাতন ভবন থেকে অন্যান্য সকল বিভাগ সমূহ নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন ভবনে ল্যাব মেডিসিন, রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং ও ব্লাড ব্যাংক বৃহৎ পরিসরে একই কমপ্লেক্স এ স্থাপন করা হয়েছে। এতে হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয়েছে এবং সেবার মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার সার্বিক কার্যক্রম ইন্টিগ্রেটেট সফটওয়্যার এর আওতায় আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান আরও একধাপ এগিয়ে গেছে।
চমাশিহা ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার : আমাদের স্বপ্নের অন্যতম মেগা প্রকল্প এবং চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত চমাশিহা ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টার আমরা অতি সম্প্রতি চালু করেছি। গত ৫ই নভেম্বর মাননীয় ভূমি জনাব সাইফুজজামান চৌধুরী এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন। ক্যান্সার হাসপাতালে অত্যাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলেরাটর মেশিন (ক্যান্সার মেশিন) ও সিটি সিমুলেটর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের সকল আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এই ক্যান্সার মেশিনে রোগীদের রেডিয়েশন সেবা দেয়া সম্ভব হবে। নতুন বছরে চট্টগ্রামবাসীর বিশেষ করে চট্টগ্রামের ক্যান্সার রোগীদের জন্য বিশেষ পাওয়া। এখানকার ক্যান্সার রোগীদের রেডিয়েশন থেরাপির জন্য এখন আর চট্টগ্রাম বাইরে যেতে হবে না। আমাদের ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারে ক্যান্সারে কনপ্রিহেসিভ চিকিৎসায় রয়েছে বিশ্বমানের লিনিয়ার এক্সিলেরাটর ট্রুবিম রেডিও থেরাপি মেশিন। এখানে আছে রেডিয়েশন অনকোলোজি, মেডিকেল অনকোলোজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, হেমাটোলজি, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও পেইন-পেলিয়্যাটিভ কেয়ার সর্বপরি এখানে রয়েছে একই ছাদের নিচে ক্যান্সারের সকল চিকিৎসা। আমরা আরও আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, দেশের খ্যাতনামা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ স্পেসালাইজ্ড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডাঃ কামরুজ্জামান চৌধুরী নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থ্যাৎ ১লা জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ থেকে চমাশিহা ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারে রোগী দেখবেন। আমরা চট্টগ্রামবাসীকে এখন থেকে চমাশিহা ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারে স্বল্প খরচে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সারের সকল চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তাবায়নে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এখনো ভবনের ৭ম তলা থেকে ১০তলা পর্যন্ত বেশ কিছু কাজ বাকী রয়েছে। এছাড়া আরও একটি রেডিওথেরাপি মেশিন বসানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নে আমরা সকলের সহযোগীতা কামনা করছি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য একুশে পদক প্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এই ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দৈনিক আজাদী পত্রিকা মিডিয়া পার্টনার হিসেবে কাজ করছেন। আমি চট্টগ্রামবাসীর এই স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়নে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তার জন্য আমি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিবারের পক্ষে থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
৩১ শে ডিসেম্বর ২০২৩ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এই উপলক্ষে আমি চট্টগ্রামবাসী, হাসপাতালের সকল সম্মানিত আজীবন সদস্য, পৃষ্ঠপোষক, ডোনার, ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানচ্ছি। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল তার স্বপ্নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করছি। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
মোঃ রেজাউল করিম আজাদ
জেনারেল সেক্রেটারী, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং
চেয়ারম্যান, গভর্নিং বডি
চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ।