তখন থেকে ১০ জানুয়ারি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে আছে। বাংলদেশের ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় দিন। কেননা, এই দিনে মহামানবের মহাপ্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে নতুন করে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিত বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে ঐতিহাসিক জনমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ভাষণে বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী নির্দেশনা ও আহ্বানের পর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে শুরু করে নির্বিচারে গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতি পাক দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।