বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে আব্বা ডেকেও বাঁচতে পারেনি রাসেল

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে রাসেল (৩২) নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পিতা তোফাজ্জল হাওলাদারের অভিযোগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাফ উদ্দিন রাব্বির নেতৃত্বে তার অফিসে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) আলমগীর হোসেন ওরফে ঠান্ডু (৩২), আমির (৩৩), শিপন (২৯), মো. রাশেদ (৩৫), অপু আহমেদ (৩৬), মো. সবুজ (৩৪), মো. সুমন (৩৭), দেলোয়ার ওরফে দেলু (৩৫), অভি (২৫), সুমন (৪০), রিপন ওরফে তোতলা রিপন (৪০)-সহ ১৫/২০ জন দুর্বৃত্ত রাসেলের ওপর কিল, ঘুষি ও উপর্যুপরি লাথির মাধ্যমে সারারাত নির্যাতন চালায়। বুধবার (১০ জানুয়ারি) ভোরে আমার আত্মীয়রা রাব্বির অফিস থেকে অচেতন অবস্থায় রাসেলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাব্বির পক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করত রাসেল। চাঁদার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রাব্বি রাসেলকে সন্দেহ করে। যার জের ধরে মঙ্গলবার রাতে তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের নিচতলায় রাব্বির অফিসে ডেকে আনা হয় রাসেলকে। সেখানে সবাই মিলে মদ্যপান করে। এরপর রাব্বির নেতৃত্বে রাসেলের ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন যা চলে রাতভর।

রাসেলের ওপর নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাসেলের পরনে কোনো জামা নেই। খালি গায়ে থাকা রাসেলকে কয়েকজন টানাহেচড়া করছে। প্রচণ্ড পিটুনিতে আধমরা অবস্থায় রাসেল রাব্বিকে বলছে, ‘আব্বা আব্বা, রাব্বি আব্বা আমাকে বাঁচান।’

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে রাসেলকে। একজন তাকে গালাগাল করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেঝেতে নিথর দেহ রাসেলের। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। কেউ একজন সেটা মুছে দিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, রাব্বির বাবা শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি বাসের উদ্দিন। সে শুভাঢ্যা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের ভাতিজা। বছরখানেক আগে বাবা ও চাচার প্রভাব খাটিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নেন। পদ পাওয়ার পর বিশাল বাহিনী নিয়ে চলাফেরা শুরু করে রাব্বি। তার বাহিনীর লোকজন স্থানীয় বিচার সালিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানদার ও রাস্তাঘাট থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।

রাব্বির অফিসে নিয়মিত বসানো হয় নেশার আসর। নিহত রাসেল রাব্বির পক্ষে চাঁদা আদায়ের কাজ করত। সে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর গ্রামের তোফাজ্জল হাওলাদারের ছেলে। দুই সন্তানসহ পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি।

এদিকে রাসেলকে হত্যার ঘটনায় বুধবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় রাসেলের পিতা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় রাব্বিসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, নিহতের পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

আরও পড়ুন