সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ

আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় বিএনপি নেতাদের মূল্যায়ন হবে কি ?

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে এক বছরের অধিক সময় ধরে আন্দোলন করলেও বিএনপি এখনো চূড়ান্ত সফলতা পায়নি। দলটির সর্বাত্মক আন্দোলনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি বলছে, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ভোট বর্জন করে সরকার ও নির্বাচনের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জানিয়েছে। এটাকে আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছে দলটি। ‘একতরফা’ নির্বাচনের ফল বাতিল এবং একদফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে আন্দোলন ঘিরে হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন কারাগারে, অনেকে ঘরছাড়া। গত কয়েক মাসে প্রায় দেড় হাজার নেতার সাজা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকে দীর্ঘসময় ধরে টেনে নিতে পারা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান।

অন্যদিকে চট্টগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন তারাও মূল্যায়ন চায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ থেকে।এখানে কে ,কখন,কোথায় মিছিল মিটিং করেছে দেখেছে।পালিয়ে থাকা পদ পদবী ব্যাবহার করা নেতাদের কি হবে এটা নিয়ে চিন্তিত তারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জনগণ একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। দাবি আদায়ে এখন মানুষকে নতুনভাবে সংগঠিত করে রাজপথের আন্দোলন শুরু করবেন। তবে নতুন করে আন্দোলনে যাওয়ার আগে সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলন—বিশেষ করে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি সফল ও বাস্তবায়নে যারা মাঠে ছিলেন, তারা নিজেদের মূল্যায়ন চান। তাদের দাবি, চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন সফলে বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এর আগে নেতাকর্মীদের যথাসম্ভব সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে কর্মসূচি পালন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনে যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে বিএনপি এখনো নতুন করে সংগঠন পুনর্গঠনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলে মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটা হতেই থাকবে। তবে আগে আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। কারণ, দেশে এখনো গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে, মানুষ এই সরকারের একতরফা-তামাশার ভোট বর্জন করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কী পাবেন না পাবেন, ভবিষ্যতে কী মূল্যায়ন হবে না হবে—নেতাকর্মীরা এটা নিয়ে ভাবছেন না। কারণ, শুধু মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে তারা আন্দোলন করছেন না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আদর্শের ভিত্তিতে নেতাকর্মীরা লড়াই করছেন। চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় হলে যারা আন্দোলনে রয়েছেন, নিশ্চয় তাদের মূল্যায়ন হবে।

বিএনপি ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে দশ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। এর অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয় দলটি। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে এবং একদফা দাবিতে পরদিন ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয় দলটি। ওই সময় থেকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন পর্যন্ত পাঁচ দফায় সাত দিন হরতাল এবং বারো দফায় ২৩ দিন অবরোধ পালন করে বিএনপি। তবে এর মধ্যে ভোট বর্জনের আহ্বানে ২১ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচনের পর ‘ভোট বর্জন করায়’ জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে গত মঙ্গল ও বুধবার দেশব্যাপী দুদিনের লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি করে বিএনপি।

বিএনপির নির্বাহী কমিটি, স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ মিলিয়ে প্রায় ৬০০ জন দায়িত্বে রয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে। এমন অবস্থায় হরতাল-অবরোধ সমর্থনে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মূলত রুহুল কবির রিজভী, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, দক্ষিণের খন্দকার এনামুল হক এনাম, উত্তরের শরিফ উদ্দিন জুয়েল, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, সরদার মো. নুরুজ্জামান, নাজমুল হাসান, ইয়াসিন আলী, দক্ষিণের জহির উদ্দিন তুহিন ও সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার, ছাত্রদলের তানজিল হাসান, আকতারুজ্জামান আক্তার, নাছির উদ্দিন নাছির, মো. মারুফ এলাহী রনি, শ্যামল মালুম, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মো. সাফি ইসলাম, ডা. আউয়ালের নেতৃত্বে একাধিক বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল হয়েছে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে অন্য নেতাকর্মীরাও ছিলেন। রিজভীর নেতৃত্বে কর্মসূচিতে ডা. রফিকুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় কমিটির দু-তিনজন ছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যম সারির নেতা এবং বেশিরভাগ পদ-পদবিবিহীন কর্মী থাকেন। বিক্ষোভ মিছিলের অন্য কর্মসূচিগুলোতে মূলত দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যম সারির নেতারাই মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা প্রথম দিকে কয়েকটি কর্মসূচিতে মাঠে থাকলেও একপর্যায়ে তাদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। সে কারণে পরে তারা মাঠে না থাকলেও তাদের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল হয়েছে। ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান কয়েকটি কর্মসূচিতে থাকলেও, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে হরতাল-অবরোধের শেষদিকে হাতেগোনা দু-তিনটি কর্মসূচিতে দেখা গেছে। কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বেও কয়েকটি মিছিল হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু মিছিল হয়েছে। কিন্তু সেটা আশাব্যঞ্জক ছিল না বলে দাবি অনেকের। এদিকে হরতাল-অবরোধের তুলনায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি ঘিরে অনেক বেশি নেতাকে মাঠে দেখা গেছে। লিফলেট বিতরণের কর্মসূচিতে গ্রেপ্তারের শঙ্কা কম থাকাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন