চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর্জা আব্বাস ও শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু সরকার শাহজাহান ওমরকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনে রাজি করিয়ে রাতারাতি বের করে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছেন। নির্বাচনে তাকে এমপিও বানানো হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, বিচার বিভাগ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে? বিচার বিভাগ একপেশে আচরণ করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আমাদের চাওয়া, রাষ্ট্রযন্ত্র কোন দলের নিজস্ব বাহিনীতে রূপান্তর না হয়ে যাতে তাদের কাঠামো মেনে চলে।
তিনি বুধবার (১৭ জানুয়ারী) দুপুরে নগরীর কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আগত সংবাদকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, মাহবুব আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আনোয়ার হোসেন লিপু, মো. কামরুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, থানা বিএনপির সভাপতি মন্জুর রহমান চৌধুরী, মামুনুল ইসলাম হুমায়ূন, মো. সেকান্দর, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাকির হোসেন, হাজী বাদশা মিয়া, গিয়াস উদ্দিন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় ড্যাবের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এস এম সারোয়ার আলম, মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত মো. ইদ্রিস আলী, মহানগর বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কারামুক্ত এমদাদুল হক বাদশা প্রমূখ।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ইতিহাসের সবচেয়ে কম ভোট পড়া নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম দাবি করে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ভোট উৎসবের পরিবর্তে চট্টগ্রামে ভোট বর্জনের এক নীরব প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি আসনের প্রার্থীদের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব আসনে প্রার্থীরা ভোটার আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেখানে ভোট পড়েছে ২০-২৬ শতাংশ। কিন্তু সারাদেশে ভোটের হার দেখানো হয়েছে ৪১ শতাংশের বেশি। যেখানে এজেন্ট ছিল না সেখানে জাল ভোটের মহোৎসব হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের কাস্টিং বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাচনকে প্রহসনের ও তামাশার ভোট মন্তব্য করে ডা. শাহাদাত বলেন, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করেছে সেখানেও ভোটের এ অবস্থা। তাতেই বোঝা যায় বিএনপি কী কারণে এ ভোট বর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ডাকা হরতাল অবরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শাহ আলম, আহবায়ক কমিটির সদস্য মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন সহ শত শত নেতাকর্মীদের নামে নগরীর প্রতিটি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজকে বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। গত আড়াই মাসে মহানগরে ৩০ টির অধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনের দিন বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করে ১২ জনকে গ্রেফতার করে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, মহানগর যুবদলের সি. যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমান ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহমান আলফাজ সহ ২০০/২৫০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের পরের দিন থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে চান্দগাঁও থানা পুলিশ কর্তৃক হয়রানিমূলক অভিযান, পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও মারধরের ঘটনা বিরতিহীনভাবে চলে আসছে।
তিনি বলেন, চান্দগাঁও থানা এলাকায় বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ এখন একাত্তরের দিনগুলোর চেয়েও চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। চান্দগাঁও এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। চান্দগাঁও থানা পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করছে। দিনে রাতে যে কোনো সময় নেতাকর্মীদের ধরতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের পিতা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। আটককৃত নেতাকর্মী কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজনদের থানায় নিয়ে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। চান্দগাঁও থানা এলাকা এখন অনেকটা পুরুষ শূন্য। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে সাধারণ মানুষও ঘরে থাকতে পারছে না।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহ সহ উল্লেখিত নেতারা ঐদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না তারপরও তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। চান্দগাঁও শরাফত উল্লাহ পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার জামাল উদ্দিন, তিনি ঐদিন বোয়ালখালী বাড়িতে ছিলেন। তাকে ২০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ক্যাশিয়ার মো. হারুনকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অথচ ঘটনার সময় পেট্রোল পাম্পের ভেতরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিবির গাড়ি পার্কিং করে রেখেছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে, দেখলে সবকিছু পরিষ্কার হবে।
তিনি বলেন, গত ৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে চান্দগাঁও থানা পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমানের মৌলভী পুকুর পাড়স্থ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার প্রবাসী বড় দুই ভাই আবেদ মাহমুদ রহমান ও ব্যাংকার জাবেদুর রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতনের পর আবেদ মাহমুদ রহমানকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া চান্দগাঁও থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক এরশাদ হোসেনের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বাবা আবদুর রাজ্জাক ও বড় ভাইকে বাসায় সবার সামনে বেধড়ক মারধর করে ও বড় ভাই মো. জাবেদকে মিথ্যা মামলায় চালান দিয়েছে। এছাড়া চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. আবছারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার মামা মো. মামুনকে, ওয়ার্ড যুবদল নেতা জিসানকে না পেয়ে তার বাবা মো. ইলিয়াস, ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. শাহিনকে না পেয়ে তার বড় ভাই মো. শামিম, চান্দগাঁও থানা যুবদলের সদস্য মো. মোবারক, মোহরা ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবদুর রাজ্জাক, যুবদল কর্মী মঞ্জুর আলম ও মো. সাইদকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদল নেতা নয়ন মাহমুদকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মো. ইদ্রিসকে বেধড়ক মারধর করেছে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এর আগে নির্বাচনের দিন চান্দগাঁও ওয়ার্ডে বিএনপির শান্তিপুর্ন মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মো. আজম, মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি গোলাপুর রহমান ও খুলশী থানা বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান সহ ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী অবস্থায় গোলাপুর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি মামলার আসামীও হয়, তাহলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু আত্মীয় স্বজনকে থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করার অধিকার পুলিশকে কে দিয়েছে? বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে সরকারের অগণতান্ত্রিক নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যা করছেন, তা চট্টগ্রামবাসী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাড়াবাড়ির পরিণাম অবশ্যই শুভ হতে পারে না। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। আপনারা আওয়ামী লীগের কর্মীর ভূমিকার অবতীর্ণ হবেন না।
ডা. শাহাদাত বলেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশুন্য করতেই ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপি নেতৃবৃন্দকে ধারাবাহিকভাবে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে। সরকার বিএনপির নেতৃত্বে চলমান একদফার আন্দোলনকে ভয় পায়। তাই মধ্যরাতের ভোট ডাকাত সরকার পুলিশকে দিয়ে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীকে আসামি করে উদ্ভট মামলা করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলা পরিকল্পিত ও মিথ্যা। সরকার দলীয় লোকজন পরিকল্পিতভাবে একেকটি ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নামে মামলা দিচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকার টিকে আছে। প্রশাসন যন্ত্রকে তাদের অবৈধ ক্ষমতায় ঠিকে থাকার খুটি হিসেবে ব্যবহার করছে। এখন আইন আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছুই শেখ হাসিনার হুকুমের দাসে পরিণত হয়েছে।
তিনি নির্বাচনের দিন চান্দগাঁও এলাকায় সংঘটিত ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির জোর দাবি জানান।