এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠককালে এডিমন গিনটিং একথা বলেন। শাখাওয়াত মুন বলেন, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এডিবি খুবই খুশি।
গিনটিং উল্লেখ করেন, এডিবি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে জ্বালানি খাত ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আরও বলেন, তারা কক্সবাজারে জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্পে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চান।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য জেলাগুলোতেও তাদের একই কাজ করার অনুরোধ জানান। তিনি বাংলাদেশের জন্য এডিবির সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে বলেন, আশা করি আপনারা সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক খাতে মূল্য সংযোজন প্রকল্প গ্রহণের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় ক্রমাগত সহায়তা করার জন্য এডিবিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এডিবিকে গত বছরে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতিতে পৌঁছানোর জন্যও ধন্যবাদ জানান।
বর্তমানে এডিবি বাংলাদেশের অর্থনীতির ৭টি প্রধান খাতে ৬১টি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এরমধ্যে পরিবহন, পানি ও শহুরে অবকাঠামো এবং সেবা, জ্বালানি, মানব ও সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি, খাদ্য, প্রাকৃতিক ও গ্রামীণ উন্নয়ন, অর্থ, সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা এবং শাসন খাত রয়েছে।
শেখ হাসিনা এডিবিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গ্রাজুয়েশন চ্যালেঞ্জের চাহিদা পূরণে, বিশেষ করে লজিস্টিক অবকাঠামোর উন্নতি এবং পরিষেবা সরবরাহকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়ার অনুরোধ করেন।তিনি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি এবং জলবায়ু জরুরি অবস্থার কারণে বাংলাদেশ এডিবির জলবায়ু অর্থায়নের একটি বড় অংশ পাবে বলে আশা করে।
তিনি এডিবির সাম্প্রতিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পাইপলাইনে বেশ কয়েকটি বাজেট সহায়তা রয়েছে। যার ওপর এডিবি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তাদের অনুমোদন নিশ্চিত করতে আগেই আলোচনা শুরু করতে পারে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এডিবি বাংলাদেশের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে যাতে দেশের প্রবৃদ্ধির গতি বজায় থাকে এবং একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ ভবিষ্যত রূপকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছে, তাই এটা আকাঙ্ক্ষিত যে এডিবি এমন প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য বড় ধরনের সহযোগিতা দেবে যা ডিজিটাল গ্যাপ কমিয়ে দেবে, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত করবে, উন্নত ও কম কার্বন প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে, সবুজ শক্তি উৎপাদন করবে, জলবায়ু-সহনশীল কৃষির সম্প্রসারণ ঘটাবে, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা এবং দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাবগুলোর সার্বিক এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। তিনি আশা করেন যে এডিবি তার পাইপলাইনে সহায়তা ব্যবস্থা রাখবে যাতে বাংলাদেশ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অবিলম্বে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে।
অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭৩ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি এডিবির প্রতিশ্রুতি ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে; যার মধ্যে ঋণের পরিমাণ ৩১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ৫৭১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ের মধ্যে এডিবির মোট প্রদেয় ছিল ২৩.২ বিলিয়ন ডলার। সূত্র: বাসস।