দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় একটি ‘সংকট এড়ানো গেছে’ বলেই মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল; তবে তিনি চান ‘স্থায়ী সমাধান’।
নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা যে ‘অনেকটা হ্রাস পেয়েছে’, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা প্রয়োজন হবে।”
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি মোটা দাগে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সেই ভোটে জিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, “সরকারের সহায়তা ছাড়া এত বড় কর্মযজ্ঞ সফল করা সম্ভব হয় না। আমাদের অপবাদ, বদনাম দুটোই নিতে হবে।”
এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতি উদ্বেগ ও সংকট থেকে ওঠে এসেছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “তবে এটা স্থায়ী সমাধান নয়। রাজনীতিবিদদের যদি আস্থা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। নির্বাচন নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর পর যদি সংকট সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে।”
সেজন্য রাজনৈতিক নেতাদের একটি গ্রহণযোগ্য ‘পদ্ধতি’ খোঁজার তাগিদ দিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার আনা সম্ভব হলে আগামীতে নির্বাচন আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।”
এবারের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, তা মনে করেন না সিইসি। তিনি বলেন, “একটি বড় দল শুধু বর্জন করেনি, প্রতিহত করতে চেয়েছিল। নির্বাচন উঠিয়ে আনায় জাতি স্বস্তিবোধ করছে, আমরা স্বস্তিবোধ করছি।”
নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, “ঈমানের সঙ্গে কাজ করে সফল হয়েছি। যে স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছেছি, সেই স্ট্যান্ডার্ড থেকে নামতে পারবে না। আমরা দেখিয়ে দেব কীভাবে এই কমিশন কাজ করে, যা ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।”
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, “আমরা ভালো একটা নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। না করতে পারলে হয়ত আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতাম। আমাদের সরকার সহায়তা দিয়েছে। না হলে একসুরে একভাবে কাজ করা সম্ভব হত না। আশা করি মান সম্মানের সঙ্গে চলে যেতে পারব।”
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, “দলগুলো যারা অংশগ্রহণ করেছে এবং সরকার, সকলেই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। আনসার থেকে শুরু করে সকলেই সহয়াতা করেছে। সরকার একটি বিরাট শক্তি, তাদের সহযোগিতা যদি না পেতাম, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারতাম না। সব দল অংশগ্রহণ করলে আরও গ্রহণযোগ্য হত।”
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, “আমরা দৃঢ় ছিলাম যে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে না পারলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।”
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।