চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির গতি গেছে বছরের তুলনায় আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ফিরে যেতে পারে (কোভিড-১৯) করোনাভাইরাস মহামারী-পূর্ব অবস্থায়। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) সম্প্রতি জ্বালানি তেলের বাজারসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর প্রতিদিন ২৩ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছিল। এ বছর বাড়বে ১২ লাখ ব্যারেল করে। মোট দৈনিক চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে।
আইইএ আরও জানায়, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন ২৮ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছিল। চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধির এ গতি ধীর হয়ে দৈনিক ১৭ লাখ ব্যারেলে নেমে যায়।
আইইএর বিশ্লেষকরা বলছেন, কভিড-১৯ সংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ার পর চীনে ভ্রমণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে এসে তা লক্ষণীয় মাত্রায় কমে যায়। ফলে পরিবহন খাতে জ্বালানি পণ্যের ব্যবহারেও ভাটা পড়ে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী। এ বছর পণ্যটির চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে দেশটি প্রায় ৬০ শতাংশ অবদান রাখবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা। এক্ষেত্রে সহায়তা করবে দেশটির পেট্রোকেমিক্যাল খাতের সম্প্রসারণ।
এদিকে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ চলতি বছরের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে। প্রতিদিন চাহিদা ২২ লাখ ব্যারেল করে বাড়তে পারে বলে মনে করছে এ অর্গানাইজেশন। এটি জানায়, আগামী বছর প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা ধীর হয়ে ১৮ লাখ ব্যারেল নামতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব দেশ দফায় দফায় সুদহার বাড়িয়েছিল, সেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এ বছর সুদহার কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পরও বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির গতি ধীর থাকবে বলে মনে করছে আইইএ। কারণ ২০২২ ও ২০২৩ সালে রেকর্ড মাত্রায় সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তা ব্যয়ে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, তা ভোগাবে এ বছরও।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়াতে গত বছর কয়েক দফায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি কমিয়েছে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। ফলে জ্বালানিটির বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়। তবে আইইএ বলছে, উত্তোলন ও রফতানি কমানোর এ ধারা অব্যাহত থাকলেও চলতি বছর সরবরাহ উদ্বৃত্তে ফিরবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো কমালেও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলসহ জোটের বাইরের দেশগুলোয় উত্তোলন বাড়বে লক্ষণীয় মাত্রায়, যা বৈশ্বিক সরবরাহ বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রাখবে।