রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ

চকলেট খাইয়ে শিশুকে অপহরণ, অনলাইনে বিক্রি!

চকলেট খাইয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে অপহরণ করা হয় সিদ্দিক (৩) নামের এক শিশুকে। পরে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাকে প্রনিল পাল নামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অপহরণের ২২ দিন পর সিদ্দিককে গোপালগঞ্জ থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এ সময় পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাব।

আটক ব্যক্তিরা হলেন পীযূষ কান্তি পাল (২৯) ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), সুজন সুতার (৩২), পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) এবং তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬)।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান। তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় মো. দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও ৭ থেকে ৮ জন শিশু-কিশোর খেলছিল। এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি এসব শিশু-কিশোরকে চকলেট খাওয়ায়।

আনোয়ার হোসেন খান বলেন, একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়েকে বলে ‘তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দেব। শিশুটির বড় বোন যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলা হয় আর তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে বাজার থেকে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, কাজ শেষে ভুক্তভোগীর মা বাসায় ফিরলে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। অনেক খোঁজার পরও সন্ধান না পেয়ে পরে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে শিশু সিদ্দিকের পরিবার।

র‍্যাব-২-এর অধিনায়ক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এরপর ২৯ এপ্রিল অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অপহৃত শিশু উদ্ধারে তৎপর হয় র‍্যাব-২। এ ঘটনায় দেশব্যাপী বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অপহৃত শিশুকে উদ্ধারে দেরি হওয়ায় শিশু সিদ্দিকের বাবা র‍্যাব-২ এর কার্যালয়ে একটি অভিযোগও দেন।

আনোয়ার হোসেন খান বলেন, র‍্যাব-২ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, পর্যালোচনা, বিভিন্ন সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পীযূষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। পীযূষ দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির জন্য সুজন সুতার নামে ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রথমে সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীসময় তার দেওয়া তথ্যমতে অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানাধীন তাড়াসি গ্রামে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়। সুজন সুতারের নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে ছিল অপহৃত শিশু সিদ্দিক। এরপর ঢাকার সাভার এলাকায় আরেকটি অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে আটক করা হয়।

পীযূষ-রিদ্ধিতা দম্পতিকে র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আনোয়ার হোসেন খান জানা, পীযূষ কান্তি পাল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালীন একটি স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে পীযূষ মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানবপাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।

তিনি বলেন, মামলায় গ্রেপ্তারের পর তিনি কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়। পীযূষ ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম’ নামের একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। আটক সুজন সুতারের সঙ্গে ওই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমেই রিদ্ধিতা পালের পরিচয় হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান বলেন, পীযূষ পাল ও রিদ্ধিতা পাল বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে থাকে। ২৬ এপ্রিল পীযূষ কান্তি পাল সাভার এলাকা থেকে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় আসেন। সাড়ে ১২টার দিকে শিশু সিদ্দিককে রাস্তায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে কোলে নিয়ে সিএনচালিত অটোরিকশায় করে গাবতলী হয়ে সাভারে তার বাসায় নিয়ে যান।

এ অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ওইদিনই রিদ্ধিতা পাল সুজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পণা দাস ও পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দেন। শিশু সিদ্দিককে প্রনিল পাল নাম দিয়ে স্ট্যাম্প করে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রি করে দেন। প্রমাণস্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্মসনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি দেন।

সুজন সুতারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আনোয়ার হোসেন খান বলেন, সুজন তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও স্ত্রীর বড় বোন বেবী সরকারের একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় শিশু সিদ্দিককে কিনে নেন। পরে ২৬ এপ্রিল রাতে সিদ্দিককে গোপালগঞ্জ দিয়ে আসেন।

আরও পড়ুন