ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ-বিদেশে সব সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, এদের আর বেশিদিন সময় নেই। সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা ঝড়ের গতির মতো আন্দোলন করতে হবে। এদের বিদায় করতে হবে।
শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে ঢাকা উত্তর বিএনপি আয়োজিত গণ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে জনসমাবেশ আয়োজন করা হয়। সারাদেশে ২৭টি স্পষ্টে একযোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে খুলানায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পরিষ্কার কথা- দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ৩৫ লাখ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে।
মানুষ রাস্তায় নেমেছে ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহসচিব বলেন, বিদেশে যতই চিল্লা-চিল্লি আর ঘোরাঘুরি করেন লাভ হবে না। টিকতে পারবেন না, সময় নেই।
মির্জা ফখরুল আরও দাবি করেন, সরকার টিকে থাকার জন্য মরণ কামড় দেবে। হাইকোর্ট জামিন দেয় কিন্তু নিম্ন আদালত এটা আটকে দেন। কোন পর্যায়ে গেছে দেশ।
মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন যাবে না, এমন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সংঘাত চাই না, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই ব্যবস্থা করুন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন- নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কোনও অনিয়ম হবে না, কিন্তু কী হয়েছিল? দেখলাম ভোটের আগে বিএনপির প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে রাতে ভোট করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে গণভবন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ গ্যাস নাই, পানি নাই, কিন্তু দাম বারবার বৃদ্ধি করছেন। সারের দাম তিন- চার গুণ বৃদ্ধি করেছেন। গ্রামে বিদ্যুতের অভাবে সেচের পামি দিতে পারছে না কৃষকরা। গণভবন থেকে বেরিয়ে আসুন, মানুষের চোখের ভাষা পড়ুন। মানুষের কী হাল করেছেন।
‘সরকার উন্নয়নের কথা বলেন কিন্তু মানুষ পেটের উন্নয়ন চায়, সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন চায়’ -যোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, কথা বলা যাবে না, কওয়া যাবে না, জীবন দিয়ে পেলাম আজব স্বাধীনতা। ঠিক কী না? সাংবাদিকরা লিখতে পারছে না। কারণ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে মুখ বন্ধ করেছে। লিখতে- বলতে ভয় পায় সাংবাদিকরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলছে তারা নাকি ঝড় মোখাকে প্রতিরোধ করেছে। মোখা-করোনা প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু এদেশের মানুষের ঝড়ে কীভাবে থাকবেন? থামাতে পারবেন না।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নতুন করে আইন করতে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশন যে কোনও আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কোথায়? বাংলাদেশের সব মানুষকে বোকা মনে করেন? কতদিন প্রতারণা করবেন? পারবেন না।
ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।