গত বছর সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার লোকজনের মুক্তির দাবিতে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার দেশটির রাজধানী কলম্বোতে শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছেন। এসময় দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও জল কামান নিক্ষেপ করেছে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্যে কয়েক ডজন ছাত্র ও আন্দোলনকারীকে কারাবন্দি করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় খাদ্য ও জ্বালানির দাম ব্যাপক বৃদ্ধির জেরে ভারতের দক্ষিণ উপকূলের এই দ্বীপ দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে দেশে হাজার হাজার মানুষের টানা আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
বিক্ষোভকারীরা কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেওয়ার পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ, পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যান।
কাতার-ভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিনিধি মিনেল ফার্নান্দেজ কলম্বো থেকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও জল কামান নিক্ষেপ করা হয়েছে। সরকার বিক্ষোভ ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফার্নান্দেজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সরকারের এই ধরনের দমন-পীড়ন তাদের থামিয়ে রাখতে পারবে না।
‘তারা বলছেন, সরকারের কৌশল হচ্ছে জনগণকে দমন ও তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন বন্ধ করা; যে আন্দোলনের কারণে গত বছর সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে।’
এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বেল আউট পাওয়ায় গত নয় মাসে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে মুল্যস্ফীতি বাড়লেও বর্তমানে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।
মঙ্গলবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা বলেছেন, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার রুপির মান প্রায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে সরকার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ৬০টি ওষুধের দাম কমানোর সুযোগ পেয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে দেশটির সরকার যানবাহন, প্রসাধনী পণ্য ও মদ্যপানীয়সহ বিভিন্ন ধরনের বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে। তবে গত বছর থেকে এসব বিধিনিষেধ ধারাবাহিকভাবে শিথিল করছে সরকার।
গত বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হলেও চলতি বছরে তা ৩ শতাংশ হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছে আইএমএফ।