সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক আরাফাত হোসেন আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১০ জুলাই মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি করেন। তিনি জানান, অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
তিনি আরও জানান, মামলাটিতে হাইকোর্ট আসলাম চৌধুরীকে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার আমরা জামিন চাইলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। তারা এ আসামির বিরুদ্ধে মোট ৬৮টি মামলা আছে বলে জানান। যার মধ্যে ৩টি মামলায় তিনি জামিন না পাওয়ায় এখনো কারাগারে রয়েছেন। গত ৭ বছর ধরে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ ভাটিয়ারির বাসিন্দা আসলাম চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাজনীল চৌধুরীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের উপপরিচালক ঋত্বিক সাহা চলতি বছরের ১৩ মে আসলাম চৌধুরী ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে থাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য দুদকে দাখিলের জন্য নোটিশ দেন। তিনি কারাবন্দি থাকায় কারাগারেও নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পেয়ে তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ২১ কর্মদিবস, এরপর আরও ১৫ কর্মদিবস সময় দেয় দুদক। কিন্তু তিনি ওই সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তিন মাস সময় চেয়ে ফের আবেদন করেন। কিন্তু সময় বৃদ্ধির সুযোগ নেই জানিয়ে তাকে নোটিশ দেয়ার পরও তিনি সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের আদেশ মোতাবেক সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলাটি তদন্তের পর ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরদিন ফৌজদারি কার্যবিধির (সন্দেহজনক) ৫৪ ধারার মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এরপর এ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। ওই মামলায় সে বছর ৩১ মে ৭ দিন এবং ৬ জুন ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই রিমান্ড শেষে সে বছর ১৩ জুন তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে আসছিলেন। ওই চেষ্টা সফল হয় ২০১৫ সালের জুন মাসে। সে সময় দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে পশ্চিমা একটি দেশে আসলাম চৌধুরীর প্রথম দফায় বৈঠক হয়। এরপর মোসাদ এজেন্টদের সঙ্গে আরও দুটি বৈঠক হয়েছে ভারতে। সর্বশেষ বৈঠকটি হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে।
মোসাদের সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের’ গোপন আলোচনার অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই বছরের ২৫ মে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। পরে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।