চটগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় দ্বাদাশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশ-বিদেশী ষড়যন্ত্রের আভাষ-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য যারা নানাধরণের ষড়যন্ত্রমূলক ছক তৈরি করছে তাদেরকে আমরা চিনি। তাদের ছক বাস্তবায়নের প্রস্তুতির আগেই তাদেরকে প্রতিহত করতে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা জানি, ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র গণতান্ত্রিক ও সাংাবিধানিক উপায় হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনগণ যাদেরকে রায় দিবে তারাই ক্ষমতায় আসীন হবে। এই নিয়মের বাইরে যারা পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করার পায়তারা করছে এবং আগেও করেছে তারা এবার কিছুতেই সফল হবে না।
আজ শনিবার সকালে স্থানীয় রহমানিয়া স্কুল মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যখনই সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন হয়েছে তখনই সাধারণ ভোটাররা আওয়ামী লীেেগর বিজয় নিশ্চিত করেছে। এখন যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন তারা কি তা কখনো দিতে পেরেছিলেন? দেশে প্রহসনমূলক নির্বাচন ও ভোট ডাকাতি তাদের আমলেই হয়েছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কথিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হ্যাঁ ও না সূচক ম্যান্ডেটে শতকরা নিরাব্বই ভাগ ভোট তার পক্ষে আদায় দেখিয়ে নিলর্জ্জকর রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন।
এই ইতিহাসতো কারোর ভুলে যাওয়ার কথা নয়। প্রধান বক্তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করতে পারলে আমাদেরতো বটেই সমগ্র জাতিকে অস্তিত্বের সংকটে পরতে হবে। ২০০১ সালে সুক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল। এরপর দেশে নৈরাজ্য, নাশকতা ও ধ্বংস ও মৃত্যুর উৎসব শুরু হয়। এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এমনকি সংখ্যালঘু পরিবারের উপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। ঐসময় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সন্ত্রাস সহ সবই অপকর্ম হয়েছে। তখন তা দেখে ক্ষমতাসীনরা আনন্দ উৎসবে মেতে ছিল। মানুষ চায় না সেই কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি হউক। তবে এটাও সত্যি যে বাঙালি বিস্তৃতিশীল জাতি। তারা সহজেই সব কিছু ভুলে যায়। এই ভুলে যাওয়াটা একধরণের পাপ ও দুর্বলতা। এর সুযোগ নিচ্ছে মানবতা বিরোধী পাশবিক শক্তি।
তিনি আরো বলেন, দেশে কয়েকটি পেশাদার সমালোচক গ্রুপ রয়েছে। এরা বিভিন্ন ইস্যুতে বিশেষকরে সরকার বিরোধী যেকোন বিষয়ে সমালোচনার বন্যা বইয়ে দেয়। এরা নাকি কথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরাই ১/১১ এর সময় অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে দেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল এবং অনির্বাচিত সরকারের অংশীদারিত্ব চেয়ে ধর্না দিয়েছিল। এরাই এখন আবার আরেকটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরা ফাইভ স্টার হোটেল ও নামী দামী ভেন্যুতে তাদের প্রেস কনফারেন্স ও সেমিনার করেন। বিভিন্নজন্যকে ফেলোশীপ দেন। এমনকি কথিত গবেষণা কর্মের জন্য সহায়তা দেন। এখন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, তাদের এই বাহারী ও ব্যয়বহুল কীর্তিকলাপের জন্য অঢেল অর্থ সরবরাহের পাইপ লাইনটা কী এবং কোথা থেকে আসে? তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা নিজেরা একে অপরের বিরুদ্ধে যতটুকু সরব হলেও আমরা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ততটুকু সরব ও সোচ্চার নয়। আমরা একে অন্যের সমালোচনা করি। কিন্তু আত্মসমালোচনা করি না।
এ বিষয়ে আমাদেরকে বুঝতে হবে এবং ভাবতে হবে। আমি দলের যে পদ পদবীতে আছি তা সঠিকভাবে পালন করছি কি না- তা যদি পালন করে না থাকি তাহলে তা হবে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মত। এই মানসিকতা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। এর আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এবং পাঁচলাইল থানা আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্য রাখেন।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী রাশেদ আলী জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম.এ রহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি। আরো বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, কাউন্সিলর মোবারক আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মোঃ ইসকান্দার ইসকু, সোহেল মাহমুদ, ইউনিট আওয়ামী লীগের মোঃ ইদ্রিস, জাহেদুল আলম, শাকিল মাহমুদ। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হাজী মোঃ হোসেন, মহিলা সম্পাদিক জোবাইরা নার্গিস খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, যুব ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, জাফর আলম চৌধুরী, ড. নেছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমদ প্রমুখ।দ্বিতীয় অধিবেশনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সভাপতি পদে কাজী রাশেদ আলী জাহাঙ্গীর সাধারণ সম্পাদক পদে এম.এ রহিমকে নির্বাচিত করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।