‘সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
শনিবার (১০ জুন) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া বলেছিলাম। তখন সারা বিশ্বের মতোই আমরা শ্রীলঙ্কা নিয়ে চিন্তিত হয়েছিলাম। এখন তো আমাদের অবস্থাও তাই। বিদ্যুৎ নেই, সবার আয় কমে গেছে। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চেয়ে অনেক কম। জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন বাড়ছে; এটাই শ্রীলঙ্কা।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে পুড়ছে। শারীরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার বলে- ঋণ পরিশোধে আমরা ব্যর্থ হইনি। যদি আপনারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হন, তাহলে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস কেন বলে বাংলাদেশে ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বাকিতে মালামাল কিনে সরকার দেশের মানুষের মাথায় বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি, বিক্ষোভ করেনি। কারণ, শ্রীলঙ্কার পুলিশ আন্দোলনকারীদের গুম করেনি, লাঠিচার্জ করেনি এবং গুলিও করেনি। সে দেশের পুলিশ আন্দোলনকারীদের দেশের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছে সেদেশের পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি দুটি কারণে- এক. তারা জানে না দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে। দুই. রাস্তায় নামলে তাদের কী হবে তা কেউ জানে না। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে জনগণ বাঁচতে পারবে কি না, ব্যবসা নিয়ে টিকতে পারবে কি না এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই। আমরা কি ব্রিটিশ আমলে আছি? পাকিস্তান আমলে আছি?
এসময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, আমরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। আমরা কোথায় যাই, কি করি তা প্যাগাসাস দিয়ে অনুসরণ করা হয়। ফাঁদ পেতে আমাদের ছবি তোলার চেষ্টা করা হয়। যারা কানাডায় বাড়ি তৈরি করে, যারা দুবাইতে ব্যবসা খোলে; তাদের পেছনে গোয়েন্দা লাগান না কেন? জি এম কাদের কি সহিংসতার সঙ্গে জড়িত? আমাদের ভয় পাচ্ছেন কেন? আমরা তো জনগণের পক্ষে কাজ করছি।
দল নিয়ে বেচাকেনা করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, দেশের মানুষ আমাদের আর বিশ্বাস করে না, তারা মনে করছে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় নিতে আমরা নাটক করছি। কারণ আমাদের কিছু মানুষ দুই নৌকায় পা দিয়ে আছে। দল নিয়ে বেচাকেনা করতে দেওয়া হবে না। যারা জাতীয় পার্টিতে থেকে আরেক দলের কথা বলেন, তাহলে সেই দলে চলে যেতে পারেন। যারা দালালি করবেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এবং লিয়াকত হোসেন খোকা প্রমুখ।