বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ

হত্যা মামলায় এমপি মোহনকে আসামি করার আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

 

নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনসহ ২০ জনকে হত্যা মামলায় আসামি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খানকে গুলি করে হত্যার মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ওই আবেদন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আবেদনটি করেন মামলার বাদী ও নিহত চেয়ারম্যানের ছেলে আমিনুর রশীদ খান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের উপপুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা, সিআইডি, পিবিআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনটি করা হয়।

আবেদনে এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন (৬৭), আসাদুজ্জামান (৫৩), জুনায়েদুল হক ভূইয়া (৫৩), ফরহাদ আলম ভূইয়া (৬৪), দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া (৫০), সৈয়দ মাসুদ পারভেজ (৪৮), ফারুক খান (৪৬), সিরাজ মিয়া, বাদল মিয়া (৫৫), আশরাফুল ইসলাম রিপন (৪৫), সুমন (৩৭), আমান উল্লাহ ভূইয়া, রাকিবুল ইসলাম ইরফান, কাউছার মিয়া (২৩), শাহাদত হোসেন (৩৯), সেলিম (৩৭), সজিব মোল্লা (৩২), আরমান পাশা (৪২), শাওন খান (২৩) ও বাবুল মিয়াকে (৫৩) হত্যা মামলায় আসামি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

আবেদনে জানানো হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ৬টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সদড়কে থানার অদূরে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান। ঘটনার পর তাকে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পিঠে বিদ্ধ দুটি গুলি বের করা হয়।

পরে চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসা শেষে ২ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর হৃদরোগ, প্রস্রাবে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ৭ মে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ মে রাত ১০ টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর ৩১ মে বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

হামলার দুই দিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগাও এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ফরহাদ হোসেন (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন বলে জানান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করে।

এসব বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মামলার বাদী আমিনুর রশীদ খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এমপি মোহন কখনো সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি না করে বরং খুনিদের শেল্টার দিয়ে আসছেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর এমপির ভাই জুনো খুনিদের বাড়িতে গরুর খিচুড়ি-মাংস খেয়ে খুনিদের নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে। এতে প্রমাণিত হয়, এমপি মোহনসহ তার অনুসারীরা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ছিল। তাই তাদের বিচার দাবিতে আমরা এই মামলায় তাদেরকে আসামি হিসেবে দেখতে চাই।’

প্রথমে কেন আসামি করা হলো না—এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুর রশীদ খান বলেন, ‘আসামি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশের জন্য পরিনি।’

অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন বলেন, ‘মরহুম উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান ছিলেন আমার পিত্রতুল্য অভিভাবক। তার মৃত্যুতে আমিও আমার অভিভাবক হারিয়ে ব্যথিত। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’

প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্র করছে।’

আরও পড়ুন