এক যুগের ব্যবধানে ভূমিহীনদের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকারের নেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফলে অনেক ভূমিহীন মানুষের আশ্রয়ণ হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় রয়েছে দেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। জনশুমারির হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে উচ্চ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জন।
বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জন মানুষের মধ্যে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশের কোনো জমি নেই। সে হিসেবে ভূমিহীনদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬৬ জন। অর্থাৎ প্রায় ৮২ লাখ মানুষের কোনো জমি নেই।
এবার আসা যাক হতদরিদ্রদের হিসাবে। জরিপ বলছে, দেশের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র বা নিম্ন দারিদ্র্যসীমার মধ্যে রয়েছে। দেশের জনসংখ্যার বিচারে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫ লাখ ১০ হাজার ৪১৯ জন।
হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশের কোনো জমি নেই বলে উঠে এসেছে জরিপে। হতদরিদ্রের সংখ্যা হিসাব করলে দেখা যায়, ৯ লাখ ৩ হাজার ৪৮৯ জনের নিজের কোনো জমি নেই।
দেশের দরিদ্র ও হতদরিদ্র দুই শ্রেণির মানুষের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে ভূমিহীনদের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪ জন। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৯১ লাখ মানুষের নিজের কোনো জমি নেই।
এ প্রসঙ্গে খানা আয়-ব্যয় জরিপের প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জরিপের মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখে বলা যায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে ভূমিহীনদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে কমেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পই না, মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে, যার কারণে ভূমিহীনদের সংখ্যাও কমেছে।
এক যুগে বড় পরিবর্তন :
২০১০ সালে দেশে উচ্চ দারিদ্রসীমায় থাকা জনসংখ্যার হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১১ সালের আদম শুমারির হিসাবে তখন জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। এ দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনসংখ্যার ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশের কোনো নিজস্ব জমি ছিল না।
সে হিসাবে তখন ৫ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৬৮ জন মানুষের কোনো জমি ছিল না। এক যুগের ব্যবধানে দেশের দারিদ্র্যসীমা যেমন কমেছে, তেমনি দেশে ভূমিহীনদের সংখ্যাও কমেছে। বর্তমান হিসাবে উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় থাকা ৮২ লাখ মানুষের কোনো জমি নেই।
ওই আদমশুমারিতে দেশে হতদরিদ্রের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। সে সময়ের জনসংখ্যার হিসাবে তা দাঁড়ায় ২ কোটি ৫৩ লাখ ৬১ হাজার ৬৯০ জন। এদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশের কোনো জমি ছিল না। সে হিসাবে তা দাঁড়ায় ৫০ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৪ জন।
২০১০ সালের জরিপের হিসাবে উচ্চ দরিদ্র ও হতদরিদ্রের মধ্যে থাকা ভূমিহীনদের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬০ লাখ ১১ হাজার ১০২ জন।
গ্রামে ভূমিহীন সবচেয়ে বেশি :
জরিপে উঠে এসেছে দেশের গ্রাম এলাকাগুলোতে ভূমিহীনদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার উচ্চ দারিদ্র্যসীমা থাকায় ৩৫ শতাংশের বেশির কোনো জমি নেই। ২০১০ সালে গ্রামের উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় থাকা মোট জনগোষ্ঠীর ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশের নিজের কোনো জমি ছিল না। ২০১৬ সালে এসে এ হার দাঁড়িয়েছিল ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশে।
শহর এলাকাগুলোকে উচ্চ দারিদ্র্যসীমায় থাকা ১৯ দশমিক ১ শতাংশের নিজেদের কোনো জমি নেই। এক যুগ আগেও এ হার অনেক বেশি ছিল। ২০১০ সালের জরিপে এ ধরনের ভূমিহীন ছিল ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায় ওই সময় শহর এলাকাগুলোতে ভূমিহীনদের হার কিছুটা বেড়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ভূমিহীনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে পরিবারের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি কিছুই নেই, কিন্তু পরিবারটি কৃষিনির্ভর, তারা ভূমিহীন। এ ছাড়া যে পরিবারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ি আছে, কিন্তু কৃষিজমি নেই, সেই পরিবারও ভূমিহীন হিসাবে গণ্য হবে। তবে বসতবাড়ির সঙ্গে কৃষিজমি থাকলে তারা ভূমিহীন হিসেবে খাসজমি পাবে না।’
ভূমিহীনদের আশ্রয়ণের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। সর্বশেষ ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে গৃহহীন মানুষকে এসব ঘর দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
ইতিমধ্যে সারা দেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভ‚মিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহনির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।