আন্তরিকতা থাকলে, একাগ্রতা থাকলে সবকিছু করা সম্ভব। নিজের কাজ মনে করলে তা আরো সহজ হয়ে যায়। গতকাল শনিবার সকালে নগরীর জাকির হোসেন রোডের সিএলএফ কমপ্লেক্সে চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ কথা বলেন। চক্ষু চিকিৎসা সেবায় আধুনিকায়ন ও দক্ষ চিকিৎসক গড়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন এই আই ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে। ভূমিমন্ত্রী বলেন, এ কাজ আন্তরিকতা, একাগ্রতা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আজকে এখানে এসে তা দেখতে পাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও এম এ লতিফ এমপি। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন নাসির উদ্দিন চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি লায়ন ডা. দেবাশীষ দত্ত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক, ফার্স্ট ভাইস গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামাল ও অধ্যাপক ডা. প্রকাশ কুমার চৌধুরী।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, লায়নিজমকে আমি মনে করতাম কেবল বসে বসে কথা বলা, খাওয়া দাওয়া করা ইত্যাদি। আমার এমন ধারণা ছিল। কিন্তু এটি আমার ভুল ধারণা ছিল। আমি সত্যি লজ্জিত। আই ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল করা বিশাল কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার দ্বারা এ কাজ করা সম্ভব না। অবশ্য সরকারও করছে। সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টর, চ্যারিটি অর্গানাইজেশনগুলো এভাবে পাশে থাকলে অনেক কাজ হয়ে যায়। এটা সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতাল একটি মহৎ কাজ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমার এলাকায় অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আছে। আমি দেখেছি। আসলে মানুষের একটি পা যদি না থাকে, একটি হাত যদি না থাকে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু চোখ না থাকলে পৃথিবীতে তার আর কিছুই থাকে না। সারাজীবন তাকে কষ্ট বয়ে বেড়াতে হয়। আমার অবস্থান থেকে আমি সবসময় আপনাদের পাশে থাকব। আমরা দুনিয়া থেকে যাওয়ার আগে আমাদের যা আছে, যার যতটুকু আছে, সেটা থেকে ব্যয় করে যাওয়ার চিন্তা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে চক্ষু সেবা দিয়ে আসা লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের মতো লায়ন্স আই ইনস্টিটিউটও চক্ষু চিকিৎসায় নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দুটি চোখ যদি অন্ধ হয়ে যায় সে ব্যক্তির জন্য সব অন্ধকার। সে অন্ধ লোকদের আলো দেখার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা লায়নিজম করছেন, মানবতার সেবায় তারা জীবনকে উৎসর্গ করছেন। সকালে ভোরে দূরে চলে যাচ্ছেন রোগীদের সেবা করার জন্য। কতজন লোক পাবেন আরেকজনের সেবা করার জন্য ছুটছেন। আমি মনে করি, মানবতার সেবায় যারা নিয়োজিত, তারা আমাদের পথপ্রদর্শক। আমরা নিজেরা কত টাকা খরচ করছি, কিন্তু দশ হাজার টাকা খরচ করলে আরেকজন ব্যক্তি চোখে দেখবে সেটা আমরা করছি না। আপনাদের মাধ্যমে সমাজ আলোকিত হবে। বিত্তবানরা একটু একটু এগিয়ে আসলে সমাজ সুন্দর থাকবে।

এম এ লতিফ এমপি বলেন, আমি দেখি, আমার এলাকায় শত শত মানুষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। যদি চোখের দৃষ্টি না থাকে, তাহলে সারা জীবন অন্ধকার। তিনি বলেন, দুনিয়া থেকে যাওয়ার আগে যতটুকু আছে তার থেকে কিছুটা ব্যয় করার চিন্তা করবেন। কালকের সকালটা আমাদের জন্য নাও আসতে পারে। আজকের কাজটা যেন আমরা আগামীকালের জন্য না রাখি।

আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, আমরা এখানে যারা বসে আছি সবাই সৌভাগ্যবান। আমাদের উচিত বাইরে যারা রয়েছে তাদের জন্য কাজ করা, তাদের নিয়ে চিন্তা করা। একজন রিকশা চালকের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একদিন এক রিকশা চালকের চাল পড়ে গিয়েছিল। আমার ছেলে তা দেখে ছুটে গিয়েছে। চালগুলো কুড়িয়ে দিয়েছে। তাকে কিছু টাকাও দিয়েছে। এটিই হচ্ছে লায়নিজম। এম এ মালেক বলেন, একদিন এক অনুষ্ঠানে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছেন, কিভাবে একুশে পদক পাওয়া যায়? আমি তাকে বলেছি, কাজ; সেটা যে কাজই হোক না কেন ভালো করেই করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক গভর্নর লায়ন ইঞ্জিনিয়ার এম আই খান, লায়ন নাজমুল হক চৌধুরী, লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, লায়ন এমএম সামসুদ্দিন, লায়ন সিরাজুল হক আনচারী, লায়ন কামরুন মালেক, লায়ন আল সাদাত দোভাষ ও লায়ন সামসুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী।

উল্লেখ্য, লায়ন্স ক্লাব অব আগ্রাবাদের প্রজেক্ট হিসেবে পরিচালিত ভবনটি সাবেক গভর্নর লায়ন এম আই খান এবং উনার পুত্র লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সাজ্জাদ চিটাগাং লায়ন্স ফাউন্ডেশনকে (সিএলএফ) দান করেছেন। ভবনটি পাওয়ায় লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা সহজ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।