ঢাকা সিটি করপোরেশনের জন্য নিয়োগ পাওয়া চিফ হিট অফিসারকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস-বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তারা।
কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি বলেন, ‘ঢাকার হিট অফিসার নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা নিছক তার একক বক্তব্য নয়। এটি তার দলের দৈন্যতা, দলের নেতাকর্মীদের নিচু মানসিকতা ও নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি। তিনি যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তার জন্য তিনি যেন নারী সমাজের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে যখন দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে নারী সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা যখন চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করছে, যখন গোটা বিশ্ব তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ঠিক তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিভাবে এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমরা বলে দিতে চাই, তিনি বোধহয় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার চিন্তাশক্তিও হারিয়ে ফেলছেন। তিনি যেন কথাবার্তা আরও সাবধান হয়ে বলেন। তিনি যেন কাদেরকে নিয়ে কি বলছেন সেটা ভেবে চিন্তে বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য একজন মেয়েকে নিয়ে করেছেন তা একজন মেয়েকে নয়, দেশের নারী-সমাজকে অপমান করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা বৈরী পরিবেশে নারী শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছি। আমরা কোনো বৈরী পরিবেশ চাই না। বাংলাদেশে যেখানে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী সেখানে এরকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য আমরা শুনতে বা মানতে চাই না। বিগত দশকে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন সন্ধ্যা সময় নারী শিক্ষার্থীরা রাস্তা দিয়ে হাটতে পারত না। অস্ত্রের ভয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে পারত না। সন্ধ্যা হলে আমাদের মুরগির মতো রুমে চলে যেতে হত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনকার মেয়েরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তারা জানে নিজেদের অধিকার কীভাবে আদায় করতে হয়। সেজন্য আমরা একতাবদ্ধ হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। মির্জা ফখরুলকে বলতে চাই, আপনি নিজে একজন বয়স্ক লোক হয়ে নিজের বয়সের একজন মেয়েকে কীভাবে বলতে পারেন আপনি তাকে দেখে হিটেড হয়ে যান। এরকম একজন লোক দলের মহাসচিব কীভাবে হয় সেটাই আমাদের প্রশ্ন। কীভাবে কথা বলতে হয় আপনাকে শিখতে হবে। না পারলে নারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আপনি এসে শিখে যান কীভাবে কথা বলতে হয়, কোন ভাষায় প্রতিবাদ জানাতে হয়। আপনাকে অবশ্যই সংবাদ সম্মেলনে নারী সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে আগামী ভোটে আমরা দেখিয়ে দেব আমাদের ক্ষমতা কতটুকু। আপনি যতদিন পর্যন্ত ক্ষমা না চাইবেন ততদিন আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাল্গুনী বলেন, বিএনপি মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আসলে নারী জাতিকে সম্মান দিতেই শিখেননি। তার পূর্বসূরিরাও তা দিতে পারেননি, তিনিও দিতে পারছেন না এবং তার উত্তরসূরিরাও দিতে পারবেন না। দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন নারীর সমতা আনয়নের জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন তখন একটি দলের মহাসচিব হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারীদের জন্য কী অবদান রাখছেন সেটাই বোধগম্য নয়।
গত ৮ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকার হিট অফিসারের ব্যাপারে বলেন, ‘বিদেশ থেকে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসে সিটি করপোরেশনে নিয়োগ দেয়, নাম দেয় হিট অফিসার। তো আমরা তো এখন হিটেড হয়ে গেলাম। চিকন গুনিয়া, ডেঙ্গু, করোনায় স্বাস্থ্য সেবা না পেয়ে পেয়ে আমরা তো এখন হিটেড বুটেড হয়ে গেলাম।’