নানা জাতের গাছের মেলা বসেছে ঢাকার আগারগাঁওয়ে। জাতীয় বৃক্ষ মেলা ২০২৩ এ প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিক্রিও হচ্ছে এসব গাছ। মেলায় বাহারি এসব গাছের মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো বনসাই। এসব বনসাই ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও মেলায় স্টল নিয়ে হাজির হয়েছে ফয়সাল নার্সারি। এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি দামের বনসাই বিক্রি করছেন তিনি। স্টল ঘুরে দেখা যায় চায়না, আফ্রিকা, ইন্ডিয়ান ও দেশি জাতের বেশ কিছু বনসাই সাজিয়ে রেখেছেন। মেলার তার স্টলের সবচেয়ে দামি বনসাই ছিল চায়না বট। গাছটির বয়স ২৫ বছর। শুরুতে এর দাম দশ লাখ চাওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত এটি বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ টাকায়।
নার্সারির মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বাজারে বনসাইয়ের চাহিদা ভালো। দেশি বনসাইয়ের চাইতে বিদেশি বনসাইয়ের আগ্রহ বেশি। আমরা এখন পর্যন্ত ২৩টি বনসাই বিক্রি করেছি। যেগুলো বাজার মূল্য লাখ টাকার উপরে। কিন্ত বাজারে নিম্ন মানের বনসাই সয়লাব হওয়ায় দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, চায়না বট নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এই গাছটি বয়স ২৫ বছর। আমাদের এখানে প্রায় ১ বছর ধরে আছে। শুরুতে এর দাম দশ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। মাঝখানে বেশ ভালই দাম উঠেছিল। ভেবেছিলাম শেষের দিকে বিক্রি হবে। এখন মেলায় বিভিন্ন স্টলে নিম্ন মানের বনসাইয়ে ভরে গেছে। রিস্ক নিতে চাচ্ছিলাম না তাই ৫ লাখে বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া বাওবাব, পাকুরসহ যেসব বনসাই রয়েছে সেগুলোও অর্ধেক দামে ছেড়ে দিতে হয়েছে।
সোমবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নানা জাতের ফুল ও ফলের গাছ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিক্রির জন্য আনা হয়েছে স্টলগুলোতে। বনজ, ফলজ, ঔষধি গাছ কিংবা ঘর সাজানোর অর্কিড। তবে এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে নানা প্রজাতির বনসাই। মেলায় আশা দর্শনার্থী ও ক্রেতারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। কেউবা আবার পছন্দের বনসাই নিয়ে দামাদামিও করছেন।
মেলায় বিভিন্ন বিদেশি বনসাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় প্রজাতির গাছের বনসাইয়ও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বট, পাকুর, নিসিন্দা, সুন্দরী, কাঞ্চন, কতবেল, তেঁতুল, হিজল, শেওড়া, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, ডুমুর, নারিকেল, নাগলিঙ্গম, বাগানবিলাস, প্রেমনা, বকুল ইত্যাদি। আর বিদেশি প্রজাতির গাছের মধ্যে রয়েছে ফাইকাস, চীনাবট, পুকেন্টি, জুনিপার, ঝুমুর, সাফেলারা ইত্যাদি।
ব্রাক নার্সারি ঘুরে দেখা গেছে বিদেশি বনসাইয়ের পাশাপাশি সুন্দর বনের সুন্দরিও ক্রেতাদের আকর্ষণ করছেন। দুই লাখ টাকা দাম হাকালেও শেষ পর্যন্ত সুন্দরী বনসাইটি বিক্রি হয়েছে দেড় লাখ টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির সেলস ম্যান রুবেল শেখ বলেন, এবারের মেলায় বেশ ভালো বনসাই বিক্রি হয়েছে। বিদেশি বনসাইয়ের পাশাপাশি দেশি বনসাইও বিক্রি হয়েছে। যারা একটু বৃক্ষ প্রেমী বা পরিবেশ সচেতন তারাই বনসাই কিনছেন।
এসময় একই স্টলে চীনাবট নিয়ে দামাদামি করছিল মিরপুরের বাসিন্দা ডা. রেবেকা জামান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমার গাছের প্রতি এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। গ্রামের বাড়িতে একটা ছোট বাগানও করেছিলাম। কিন্তু শহরে বাগান করবো জায়গা কই। অল্প জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির অনেক বনসাই গাছ রাখা যায়। অনেক বছর বয়সের বনসাই ঘরের ভেতর ও অফিসের টেবিলসহ বিভিন্ন স্থানে রাখা যায়। এতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তাই মেলায় এসেছি। শেষ সময়ে দামও একটু কম থাকে।
মেলায় আরেক বনসাই বিক্রেতা হোসেন বলেন, আমরা শুরু থেকে অনেক বনসাই উঠিয়েছি। যা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন চায়না বট ও সুন্দরি বনসাই আছে। তবে কেউ চাইলে আমরা এনে দিতে পারি।
গত ৫ জুন থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চলছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা। চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত। জাতীয় বৃক্ষ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি।’